Thursday, April 27, 2017

সুওয়ালঃ তাবীজ ব্যবহার করার হুকুম কি?

জাওয়াবঃ


হাদীস শরীফ থেকে এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, জাহেলী যুগে বিভিন্ন অসুস্থতা বালা মুসিবত ইত্যাদির জন্য ঝাড় ফুঁক করা তাবিজ ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রচলন ছিল। তাদের অনেকে শিরকী কালাম ইত্যাদি দ্বারা ঝাড় ফুঁক করত। তাবিজ ইত্যাদি গলায় ঝুলিয়ে রেখে তার উপর ভরসা করত। আল্লাহপাক উনার প্রতি আরোগ্যের বিশ্বাস না রেখে শুধুমাত্র তাবিজের উপর বিশ্বাস রাখত। তারা মনে করত এই তাবিজই তাকে আরোগ্য দান করবে। এ জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরণের ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করতে নিষেধ করেছিলেন।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَلا أَتَمَّ اللَّهُ عَلَيْهِ
হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি রক্ষাকবচ ঝুলিয়ে রাখল, আল্লাহ পাক তাকে সম্পন্ন করবেন না৷ অর্থাৎ তাকে সুস্থ করবেন না৷ (মুসনাদে আবী ইয়ালা ৩/২৯৫ হা. ১৭৫৯ মুসনাদে উকবা ইবনে আমের জুহানী।)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় ঝাড় ফুক করা, রক্ষাকবচ ব্যবহার করা ও স্বামী বা স্ত্রীকে (ঝাড় ফুঁক বা রক্ষকবচের মাধ্যমে) বশিভুত করা শিরক৷ ( আবু দাউদ ৪/১১ হা. ৩৮৮৫ চিকিৎসা অধ্যায়, তাবিজ ঝুলিয়ে রাখা পরিচ্ছেদ।)

(تميمة) তামিমাতুন শব্দের তাহকীকঃ

التميمة خرزة رقطاء تنظم في السير ثم يعقد في العنق. –
[খারাযাতুন- পুঁথি যাকে মোতির মালায় গাঁথা হয়৷ সীসা বা কাঁচের টুকরা, আংটির পাথর৷ রাক্বতাউ- ফিতনা ফাসাদ৷ তুনযামু- গাঁথা হয়৷ফিস সায়রি- চামড়ার লম্বা টুকরা, ফিতা, বেল্ট৷ছুম্মা- অতপর৷ইউক্বাদু- বাঁধা হয়, গিঁঠ দেওয়া হয়৷ফিল উনুক্বি- ঘাড়ে৷]অতএব অর্থ হবে,
বিভিন্ন প্রকারের ফিতনা ফাসাদ দূর করতে ব্যবহৃত পুঁথি যা চামড়ার লম্বা টুকরায় বা ফিতায় গাঁথা হয়, অতপর ঘাড়ে বাঁধা হয়৷ অর্থাৎ রক্ষাকবচ৷( আলমুখাসসিস ফিল লুগাহ ৪/২১ নৃত্য করা পরিচ্ছেদ৷ আলকামূসুল মুহিত ১/১৪০০)

قال الازهري التمائم واحدها تميمة وهي خرزات كان الاعراب يعلقونها علي اولادهم يتقون بها النفس اي العين بزعمهم وهو باطل. আযহারী বলেন, التمائم আততামায়েম শব্দ বহুবচন, একবচন হলো, تميمة তামীমাতুন৷ আর তা হলো, পুঁথি বা সীসার টুকরা, আরববাসীরা তাদের সন্তানদেরকে ঐ পুঁথি বা সীসার টুকরা ঝুলিয়ে দিতেন, যা তাদের বাতিল ধারণা মতে বদ নসরুল বা কুদৃষ্টি থেকে বেচে থাকত৷(আলমুগরিব ফি তারতীবিল মুরিব 1/245 তা পরিচ্ছেদ, তা ও মীম৷)

সুতরাং تميمة তামীমাতুন অর্থ হলো, বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শিরকযুক্ত ধারণীয় মন্ত্রপূত কবচ, যা আরববাসীরা শিশুদের গলায় দিতেন ও তারা ধারণা করতেন যে, এ রক্ষাকবচ দ্বারা তাদের সন্তানগণ কুদৃষ্টি ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকবে৷
(এ হাদীস দুটি সম্পর্কে শেষের দিকে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে)
বিভিন্ন বালা মুসিবতের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন দুআও শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাসুল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদিতে শিরক জাতীয় কিছু না থাকলে তা করার অনুমোদন দিয়েছেন।

পরবর্তীতে ঝাড় ফুঁক ও তাবিজের অনুমোদনঃ

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَخَّصَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لأَهْلِ بَيْتٍ مِنَ الأَنْصَارِ فِى الرُّقْيَةِ مِنَ الْحُمَةِ.
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আনসার পরিবারের লোকদের বিষক্রিয়ার ঝাড় ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৪ হা. ৫৫৫৫ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)
جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ أَرْخَصَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- فِى رُقْيَةِ الْحَيَّةِ لِبَنِى عَمْرٍو.
قَالَ أَبُو الزُّبَيْرِ وَسَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ لَدَغَتْ رَجُلاً مِنَّا عَقْرَبٌ وَنَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرْقِى قَال مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ

হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু আমর গোত্রের লোকদের সর্প দংশনে ঝাড় ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। আবু যুবাইর বলেন, আমি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহকে রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনাকে বর্ণনা করতে শুনেছি, আমাদের একজনকে বিচ্ছু দংশন করল। আমরা তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বসা ছিলাম। এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম! আমি ঝেড়ে দেই? তিনি বলেন, তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তা করে।(মুসলিম শরীফ ৭/২৬৭ হা. ৫৫৬৪ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

শিরক না হওয়ার শর্তে ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করার অনুমোদনঃ

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِىِّ قَالَ كُنَّا نَرْقِى فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِى ذَلِكَ فَقَالَ ্র اعْرِضُوا عَلَىَّ رُقَاكُمْ لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ .
হযরত আউফ ইবনে মালেক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহেলিয়াতের যুগে আমরা ঝাড় ফুঁক করতাম। আমরা আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম! এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার সামনে পেশ কর। ঝাড় ফুঁকে যদি শিরকের শব্দ না থাকে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।
(মুসলিম শরীফ ৭/২৬৮ হা. ৫৫৬৯ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ كَانَ لِى خَالٌ يَرْقِى مِنَ الْعَقْرَبِ فَنَهَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الرُّقَى – قَالَ – فَأَتَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقَى وَأَنَا أَرْقِى مِنَ الْعَقْرَبِ. فَقَالَ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ
হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার এক মামা বিচ্ছুর বিষ ঝাড়তেন। অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করেন। তিনি তার কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করেছেন। আমি বিচ্ছুর বিষ ঝেড়ে থাকি। তিনি বললেন তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তার উপকার করে। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৭ হা. ৫৫৬৫ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الرُّقَى فَجَاءَ آلُ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ كَانَتْ عِنْدَنَا رُقْيَةٌ نَرْقِى بِهَا مِنَ الْعَقْرَبِ وَإِنَّكَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقَى. قَالَ فَعَرَضُوهَا عَلَيْهِ. فَقَالَ ্র مَا أَرَى بَأْسًا مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ গ্ধ.
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করলেন। আমর ইবনে হাযম গোত্রের লোকেরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এসে আরজ করল ইয়া রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে কিছু মন্ত্র আছে। এ দিয়ে আমরা বিষ ঝেড়ে থাকি। আপনি তো ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারা মন্ত্রগুলো উনার সামনে পেশ করল। তিনি বললেন এতে খারাপ তো কিছু নেই। তোমাদের যে কেউ তাঁর ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তা করে। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৮ হা. ৫৫৬৮ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করে বিনিময় গ্রহণও করাও বৈধঃ

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانُوا فى سَفَرٍ فَمَرُّوا بِحَىٍّ مِنْ أَحْيَاءِ الْعَرَبِ فَاسْتَضَافُوهُمْ فَلَمْ يُضِيفُوهُمْ. فَقَالُوا لَهُمْ هَلْ فِيكُمْ رَاقٍ فَإِنَّ سَيِّدَ الْحَىِّ لَدِيغٌ أَوْ مُصَابٌ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ نَعَمْ فَأَتَاهُ فَرَقَاهُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَبَرَأَ الرَّجُلُ فَأُعْطِىَ قَطِيعًا مِنْ غَنَمٍ فَأَبَى أَنْ يَقْبَلَهَا. وَقَالَ حَتَّى أَذْكُرَ ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم-. فَأَتَى النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ. فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاللَّهِ مَا رَقَيْتُ إِلاَّ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ. فَتَبَسَّمَ وَقَالَ وَمَا أَدْرَاكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ ثُمَّ قَالَخُذُوا مِنْهُمْ وَاضْرِبُوا لِى بِسَهْمٍ مَعَكُمْ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল সাহাবী সফরে ছিলেন। তারা আরবের কোন গ্রাম দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তাদের কাছে আতিথ্য চাইলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করল। তারা বলল, তোমাদের কেউ কি ঝাড় ফুঁক জানে? আমাদের এই গ্রামের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে। এক সাহাবী বললেন, হ্যাঁ! আমি ঝাড় ফুঁক জানি। অতএব তিনি তাদের সাথে গেলেন এবং সুরা ফাতিহা পাঠ করে তাকে ঝাড়লেন। সে ভাল হয়ে গেল। তাকে এক পাল বকরী দেয়া হল। কিন্তু তিনি তা গ্রহন করলেন না এবং বললেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করে নেই। অতএব তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এসে সবকিছু বর্ণনা করলেন এবং বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্যকিছু কোন দুয়া পড়িনি। তিনি মুচকি হেসে বললেন এটা যে দুয়া তা তুমি কিভাবে জানলে? অতপর তিনি বললেন, তাদের থেকে বকরি গ্রহণ কর এবং আমাকেও একটা ভাগ দিও। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৯ হা. ৫৫৭০ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, কুরআন এবং দুআর সাহায্যে ঝাড় ফুঁক করে বিনিময় নেয়া জায়েয।)

তাবিজ ঝুলানোও হাদীস থেকে প্রমাণিতঃ
أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال إذا فرغ أحدكم في النوم فليقل أعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وعقابه وشر عباده ومن همزات الشيطان وأن يحضرون فإنها لن تضره قال وكان عبد الله بن عمرو يعلمها من بلغ من ولده ومن لم يبلغ منهم كتبها في صك ثم علقها في عنقه
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ঘুমাবে তখন বলবে-
أعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وعقابه وشر عباده ومن همزات الشيطان وأن يحضرون
তবে তার কোন প্রকার ক্ষতি হবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার উনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে দুআটি শিক্ষা দিতেন। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এর জন্য একটি কাগজে লিখে তার গর্দানে ঝুলিয়ে দিতেন।
ইমাম তিরমিযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। (তিরমিযি ৫/৪৫১ হা. ৩৫২৮ দাওয়াত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৯৪। আবু দাউদ ৪/১৮ হা. ৩৮৯৫ চিকিৎসা অধ্যায়, মন্ত্রপড়া অনুচ্ছেদ।)

হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার তাবিজ ব্যবহার নিষিদ্ধ এর হাদীসঃ

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَلا أَتَمَّ اللَّهُ عَلَيْهِ
হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি রক্ষাকবচ ঝুলিয়ে রাখল, আল্লাহ তায়ালা তাকে সম্পন্ন করবেন না৷ অর্থাৎ তাকে সুস্থ করবেন না৷ (মুসনাদে আবী ইয়ালা ৩/২৯৫ হা. ১৭৫৯ মুসনাদে উকবা ইবনে আমের জুহানী।)
হাদীসটির সনদে একজন বর্ণনাকারী হলেন খালেদ ইবনে উবায়দ৷ তিনি মাজহুল অপরিচিত৷ অতএব হাদীসটির রাবী সিকাহ নয়৷
যেহেতু অসুস্থতা ও বিভিন্ন বালা মুসিবত আল্লাহর তরফ থেকেই আসে এবং তার আরোগ্যও তিনিই করেন৷ যেহেতু রক্ষাকবচ ব্যবহার করা হয় এবং তার উপর ভরসা করা হয়, সেহেতু বলেছেন তাকে আল্লাহ আরোগ্য করবেন না৷
وفي الحديث من علق تميمة فلا اتم الله له. ويقال هي خرزة. وأما المعاذات إذا كتب فيها القرآن وأسماء الله عز وجل فلا بأس بها. হাদীসে বর্ণিত, من علق تميمة فلا أتم الله له. তামীমাহকে পুঁথি বলা হয়৷ তবে তাহাদের যদি কুরআন বা আল্লাহর নাম লেখা হয়, তবে তাতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই৷ মুকতারুস সিহাহ 1/83 তা পরিচ্ছেদ৷ আস সিহাহ তাজুল লুগাহ ওয়া সিসাহুল আরাবিয়্যাহ 7/180৷

এ ছাড়াও হাদীসটির বর্ননা ত্র“টিযুক্ত
عن عقبة (من تعلق تميمة فلا أتم الله له) أعله ابن حبان بأنه له أحاديث مناكير يتفرد بها عن عقبة, فمثله لا يحمل تفرده عن عقبة, فيعل هذا الخبر بمثل هذه العلة, ومنهم من يعله بأنه سيء الحفظ يصيب ويخطيء, وهناك غير ذلك.
হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলায় আল্লাহ তায়ালা তাকে সুস্থ করবেন না।

ইবনে হিব্বান রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদীসটিকে মুআল্লাল তথা ত্র“টিযুক্ত বলেছেন। কেননা তার তার অধিক মুনকার হাদীস রয়েছে। আর উকবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে এই হাদীসটি একক বর্ণনা। এ জাতীয় একক বর্ণনা উকবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে গ্রহণ করা যায়না। আর তা এই ত্র“টিতে ত্র“টিযুক্ত। অনেকে একে মুখস্থ শক্তির দুর্বলতা কখনও সঠিক আর কখনও বেঠিক হওয়ার কারণে ত্র“টিযুক্ত মনে করেন। অথচ এখানে এমন নয়। (শরহুল মুকিযা ১/২৭)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার এর ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি শিরক এর হাদীসঃ

إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ
إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় ঝাড় ফুঁক করা তাবিজ করা ও স্বামী বা স্ত্রীকে (ঝাড় ফুঁক বা তাবিজের মাধ্যমে) বশিভুত করা শিরক।
(আবু দাউদ ৪/১১ হা. ৩৮৮৫ চিকিৎসা অধ্যায়, তাবিজ ঝুলিয়ে রাখা পরিচ্ছেদ।)

হাদীসের পরিপূর্ণ অংশ দেখলে বুঝা যায় যে, তিনিও ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করা জায়েয মনে করতেন। যেহেতু তার স্ত্রীর চোখে সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে একজন ইহুদী ব্যাক্তির কাছ থেকে ঝাড় ফুঁক করেছেন। সে কারণে তিনি এমন বলেছেন।
পরবর্তী হাদীসের অংশ হল,
قَالَتْ قُلْتُ لِمَ تَقُولُ هَذَا وَاللَّهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِى تَقْذِفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلاَنٍ الْيَهُودِىِّ يَرْقِينِى فَإِذَا رَقَانِى سَكَنَتْ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّمَا ذَاكِ عَمَلُ الشَّيْطَانِ كَانَ يَنْخَسُهَا بِيَدِهِ فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِى كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ ্র أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
হযরত আব্দল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার এর স্ত্রী যায়নাব বললেন, আমি বললাম- আপনি এমন (নিশ্চয় ঝাড় ফুঁক করা তাবিজ করা ও স্বামী বা স্ত্রীকে {ঝাড় ফুঁক বা তাবিজের মাধ্যমে} বশিভুত করা শিরক) বললেন কেন? আল্লাহর কসম! আমার চোখে সমস্যা ময়লা নির্গত হয়। চক্ষু লাফালাফি করে। এ সমস্যা অনুভব হলে ওমুক ইহুদীকে আমাকে ঝাড় ফুঁক করতে বলি, সে আমাকে ঝাড় ফুঁক করলে আমার চক্ষু শান্ত হয়। ভাল হয়। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বলেন, ইহা শয়তানের কাজ। সে তার হাত দিয়ে চোখে গুতাগুতি করে। যখন ঝাড় ফুঁক করে তখন সে বিরত থাকে। আর তাই তোমার জন্য যথেষ্ট হল যে, তুমি বলবে যেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন এই দুআটি।
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আর তাই হযরত আব্দল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ঝাড় ফুঁককে অপসন্দ করতেন।

কারণ তিনি তার স্ত্রীকে বলেছেন-
إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِى كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আর তাই তোমার জন্য যথেষ্ট হল যে, তুমি বলবে যেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন এই দুআটি।
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
তবে তিনিও কুরআন বা আল্লাহর যিকির দ্বারা ঝাড় ফুঁক করাকে জায়েয মনে করতেন।

তবে যেহেতু তার স্ত্রী যায়নাব ইহুদী থেকে ঝাড় ফুঁক করিয়েছিলেন। সুতরাং তা শিরকি শব্দ বা যাদু ইত্যাদি হওয়ার কারণে তিনি এটি শয়তানের আমল বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা তখন সাধারণত সকলেই শিরকি কালাম দ্বারা ঝাঁড়, ফুঁক, তাবিজ ইত্যাদি করত।

যেমন বর্ণিত হয়েছে-
وروى ابن وهب عن يونس بن يزيد عن ابن شهاب قال بلغني عن رجال من أهل العلم أنهم كانوا يقولون إنه نهى عن الرقي حتى قدم المدينة وكان الرقي في ذلك الزمن فيها كثير من كلام الشرك فلما قدم المدينة لدغ رجل من أصحابه قالوا يا رسول الله قد كان آل حزم يرقون من الحمة فلما نهيت عن الرقى تركوها فقال ادعوا لي عمارة وكان قد شهد بدرا قال اعرض علي رقيتك فعرضها عليه ولم ير بها بأسا وأذن له فيها
ইবনে ওয়াহহাব থেকে, তিনি ইউনুস ইবনে ইয়াযিদ থেকে তিনি ইবনে শিহাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহলে ইলমের অনেক ব্যক্তি আমার নিকট পৌঁছিয়েছে যে, তারা বলতেন, তাদেরকে ঝাঁড়, ফুঁক ইত্যাদি থেকে নিষেধ করা হয়েছে মদিনায় আগমন করা পর্যন্ত। আর সে যুগে ঝাঁড় ফুক, তাবিজ ইত্যাদিতে শিরকি কালাম থাকত, যখন মদিনায় এলেন, তাদের সাথীদের মধ্যে একজন ব্যক্তি বিষক্রিয়ায় দংশন করা হল, তারা বলল ইয়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর ইবনে হাযম গোত্রের লোকেরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাঁড় ফুঁক ইত্যাদি করতে পারে। আপনি নিষেধ করা থেকে তারা তা ছেড়ে দিয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার নিকট উমারা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে ডাক, তিনি বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন, অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মন্ত্রগুলোকে পেশ কর, তিনি তা পেশ করলে তাতে খারাপ কিছু দেখলেন না। অতপর অনুমতি দিলেন।(উমদাতুল কারী ৩১/৩৬৮ চিকিৎসা অধ্যায়, বিচ্ছু দংশন পরিচ্ছেদ।)
অতএব বুঝা গেল সে যুগে যেহেতু শিরকি কালাম দ্বারা তাবিজ করা হত, সে কারণেই হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার তা থেকে নিষেধ করেছেন।

عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه كان يكره الرقي إلا بالمعوذات قلت قال الطبري هذا حديث لا يجوز الاحتجاج بمثله إذ فيه من لا يعرف ثم إنه لو صح لكان إما غلطا أو منسوخا بقوله وما أدراك أنها رقية
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদিকে অপসন্দ করতেন। তবে আল্লাহর নাম বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষা দেয়া দুআসমুহ পড়াকে পসন্দ করতেন।

আমি বলি- ইমাম তবরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন এই হাদীস দ্বারা দলিল দেয়া জায়েয নয়। কেননা এতে বর্ণনাকারী অপরিচিত। এরপরও যদি একে সঠিক ধরাও হয়, তবে তা ভুল হবে বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা
وما أدراك أنها رقية “এটা যে মন্ত্র তা তুমি কিভাবে জানলে?” দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।(উমদাতুল কারী ৩১/৩৫৭)

সারসংক্ষেপঃ
উপরোক্ত হাদীসের আলোচনা দ্বারা এ কথা প্রতিয়মান হল যে, ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করা বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো না করা বিষয়েও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি শিরক হলে এগুলো নিষিদ্ধ হবে। আর নিষিদ্ধ বিষয়ের হাদীসগুলিও সহীহ নয়। ত্রুটিযুক্ত।
তবে ঝাড় ফুঁক তাবিজে শিরক জাতীয় শব্দ না হলে ঝাড় ফুঁক করা যাবে এবং তাবিজও ব্যবহার করা যাবে। কোন ব্যাক্তি ঝাড় ফুঁক ও তাবিজ এর উপর ভরসা না করে আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং তাতে শিরক জাতীয় কিছুই না থাকলে ব্যবহার করতে পারবে। এতে কোন প্রকার সমস্যা নেই।
আল্লামা ইবনে হজর আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফতহুল বারী তে লিখেন-
وقد أجمع العلماء على جواز الرقي عند اجتماع ثلاثة شروط أن يكون بكلام الله تعالى أو بأسمائه وصفاته وباللسان العربي أو بما يعرف معناه من غيره وأن يعتقد أن الرقية لا تؤثر بذاتها بل بذات الله تعالى
ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ঝাড় ফুঁক জায়েয হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত বিদ্যমান থাকতে হবে।
১. আল্লাহর কালাম বা উনার নাম বা উনার গুণাবিশিষ্ট নাম হতে হবে।
২. আরবী ভাষা হতে হবে বা অন্য ভাষা হলে তার অর্থ জানতে হবে।
৩. এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি নিজস্ব কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। বরং আল্লাহ তাআলাই প্রভাব ফেলেন। অর্থাৎ ঝাড় ফুঁক তাবিজ কখনও আরোগ্য দিতে পারেনা। বরং আরোগ্যদানকারী স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই।

ফতহুল বারী ১০/১৯৫

সুতরাং শরীয়তের আলোকে ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদিতে উপরের শর্ত বিদ্যমান থাকলে আর্থাৎ শিরক জাতীয় কিছু না থাকলে এবং উহার উপর ভরসা না থাকলে ঝাড় ফুঁক ও তাবিজ ব্যবহার করা জায়েয হবে। এতে কোন প্রকার সমস্যা নেই। এমনকি শিরক বা হারামও নয়। যারা এমন (শিরক বা হারাম) বলে থাকে তাদের কথা সঠিক নয়।
আল্লাহ সকলকে বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment