জাওয়াব :
‘আখিরি’ শব্দটির অর্থ- শেষ। আর
‘চাহার শোম্বাহ’ শব্দ এর অর্থ- আরবিয়া বা বুধবার। ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ
শরীফ’ বলতে ছফর মাসের শেষ আরবিয়া বা বুধবারকে বুঝানো হয়ে থাকে। মূলত এ
দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহা খুশির দিন।
এ মুবারক দিনটি সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে,
পবিত্র ১১ হিজরী সনের মুহররমুল হারাম শরীফ উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ
পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত করার বিষয়ে
পবিত্র ওহী মুবারক করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত মুবারক করেন এবং
পবিত্র জিয়ারত মুবারক শেষে উনার ছের মুবারকে মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ
করেন। এর ৮/১০ দিন পর তিনি আবার ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর
পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন
তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত মুবারক করার বিষয়ে পবিত্র ওহী
মুবারক করেন। অতঃপর তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী জিয়ারত মুবারক করেন।
পবিত্র জিয়ারত মুবারক শেষে তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখেন এবং
তিনি ‘ওয়াহ রাসাহু’ ‘ওয়াহ রাসাহু’ অর্থাৎ আমার ছের মুবারক, ছের মুবারক
একথা বলে উনার ছের মুবারক উনার মারীদ্বী শান মুবারক উনার কথা উল্লেখ করেন
এবং পর্যায়ক্রমে মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ পেতে থাকে। অতঃপর এই পবিত্র
ছফর শরীফ মাস উনার ৩০ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়া বা বুধবার দিন সকালে তিনি
ছিহ্হাতী শান মুবারক গ্রহণ করেন। ফলে ভোর বেলা ঘুম মুবারক থেকে জেগে তিনি
বললেন, ‘আমার নিকট কে আছেন?’ এ কথা শুনামাত্রই উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ছুটে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া
হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য
কুরবান হোক। আমি হাযির আছি।’ তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! মারীদ্বী শান মুবারক ত্যাগ করে ছিহহাতী শান
মুবারক গ্রহণ করার ফলে শরীর মুবারক বেশ হালকা মনে হচ্ছে।’ সুবহানাল্লাহ! এ
কথা শুনে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত
আনন্দিত হলেন এবং তাড়াতাড়ি পানি এনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছের মুবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত
জিসিম মুবারক উনার মধ্যে পানি মুবারক ঢেলে ভালোভাবে গোসল মুবারক করিয়ে
দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এ সংবাদ পেয়ে অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন
আলাইহিন্নাস সালাম উনারা খিদমত মুবারকে হাযির হলেন।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! ঘরে কোনো খাবার আছে কি?’ তিনি জবাব দিলেন,
‘জী-হ্যাঁ।’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আমার জন্য তা নিয়ে আসুন আর আমার হযরত আওলাদ শরীফ
অর্থাৎ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকেসহ অন্যান্য আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম
উনাদেরকে খবর দিন। আর হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি
রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেও নিয়ে আসতে বলুন।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সকলকে সংবাদ দিলেন।
অতঃপর হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিসহ অন্যান্য আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম
উনারা এবং হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সবাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এসে হাযির
হলেন।
অতঃপর রুটি-গোশত ও সিরকা মুবারক তা নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
খিদমত মুবারক-এ পরিবেশন করা হলো। তিনি সকলকে নিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে খুশী
প্রকাশ করলেন। সংবাদ শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম
উনারাও বাইরে এসে হাযির হন। কিছুক্ষণ পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইরে এসে উনাদেরকে লক্ষ্য করে
বললেন, ‘হে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আমার
পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে?’ এ কথা শুনে হযরত
ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ব্যাকুলচিত্তে কান্না
শুরু করলেন। উনাদের এ অবস্থা দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্ত¡না দান করলেন। অতঃপর
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন মারীদ্বী শান
মুবারক গ্রহণ করার পর ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করে মসজিদে নববী শরীফ
তাশরীফ মুবারক আনেন এবং নামাযের ইমামতি করেন এই অপার আনন্দে হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্øাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
পবিত্র ক্বদম মুবারকে হাদিয়া পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত রয়েছে যে, খুশি হয়ে হযরত
ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাত হাজার দীনার, হযরত ফারূকে আ’যম
আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচ হাজার দীনার, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি
দশ হাজার দীনার, হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তিন
হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
একশত উট ও একশত ঘোড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় হাদিয়া করতঃ মহান আল্লাহ
পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করেন।
সুবহানাল্লাহ! আর একারণেই পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা হযরত
খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। উনাদেরকে অনুসরণ
করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوهُمْ بِاحْسَانٍ رَّضِىَ الله عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
অর্থ: “যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, মহান আল্লাহ
পাক তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি
সন্তুষ্ট।” আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين الـمهديين
“তোমাদের জন্য আমার সুন্নত মুবারক এবং
আমার হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারক অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ)
মূলকথা হলো- সুমহান ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ
শরীফ’। অর্থাৎ পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি শরীফ বা
বুধবার। যা কুল কায়িনাতের সকলের জন্য এক সুমহান ঈদ বা খুশির দিন। এ
উপলক্ষে সকলের জন্য আবশ্যক হচ্ছে- সেই মুবারক দিনে খুশি প্রকাশ করে
সাধ্যমতো হাদিয়া পেশ করা, গোসল করা, ভালো খাওয়া, অধিক পরিমাণে পবিত্র মীলাদ
শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা। এর সাথে সাথে
দান-ছদক্বা করাও। আর বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব
ও কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিনটি পালনের সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণসহ এ
মুবারক দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
কেউ কেউ ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ
শরীফ’ উদযাপন করাকে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!
যা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও ভুল। বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের অনুসরণে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উপলক্ষে সাধ্যমত
গরিব-মিসকীনদেরকে দান-খয়রাত করা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ
পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলত ও মর্যাদা লাভের কারণ। {দলীল: সমূহ সীরাতগ্রন্থ।}
No comments:
Post a Comment