Sunday, July 2, 2017

সুওয়াল : ইদানিং ব্লগ বা ফেসবুকে কিছু নাস্তিক বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ৬ বছর বয়স মুবারকে শাদী মুবারক হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে থাকে। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ৬ বছর বয়স মুবারকে শাদী মুবারক হওয়ার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো দলীল আছে কি না?

জাওয়াব : 


উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার ৬ বছর বয়স মুবারকে আক্বদ বা শাদী মুবারক হওয়ার বিষয়টি অর্থাৎ বাল্য বিবাহ সুন্নত হওয়ার বিষয়টি যারা অস্বীকার করে, তারা অসংখ্য ছহীহ পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার কারণে কাফির!
কেননা বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, উনার বয়স মুবারক যখন ৬ বছর তখন উনার সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় এবং ৯ বছর বয়স মুবারক-এ তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফ-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! এ বিষয়টি একটি নয় দুটি নয় বরং অসংখ্য পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই অকাট্যভাবে প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, এ বিষয়টি অস্বীকার করার অর্থ হচ্ছে একাধিক পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করা। আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ অস্বীকার করা কাট্টা কুফরী। আর যে কুফরী করে সেই কাফির হয়। নাউযুবিল্লাহ!
আমরা নির্ভরযোগ্য পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনার কিতাব মুবারক থেকে এ সম্পর্কিত দলীল-আদিল্লাহসমূহ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ছহীহ বা বিশুদ্ধ কিতাব ‘মুসনাদে আবী দাউদ তাইয়ালাসী শরীফ’ উনার বর্ণনা-
حدثنا أبو داود قال : حدثنا حماد بن سلمة، عن هشام بن عروة، عن أبيه، عن حضرت ام الـمؤمنين عائشة الصديقة عليها السلام قالت: تزوجنى رسول الله صلى الله عليه وسلم وأنا بنت ست …. بمكة ، وبنى بى بالـمدينة وأنا بنت تسع.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমার আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন আমার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তা সম্পন্ন হয়েছিলো পবিত্র মক্কা শরীফ-এ। ……. আর ৯ বছর বয়স মুবারকে পবিত্র মদীনা শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে আমি তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করি।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আবী দাউদ তাইয়ালাসী যিকরু উরওয়াহ ইবনে যুবাইর আন ছিদ্দীকাহ আলাইহাস সালাম।)
حدثنا عبد الله بن عامر بن زرارة الحضرمي حدثنا يحيى بن زكريا بن أبي زائدة عن محمد بن عمرو عن يحيى بن عبد الرحمن بن حاطب : عن حضرت ام الـمؤمنين عائشة الصديقة عليها السلام ان رسول الله صلى الله عليه و سلم تزوجها وهي بنت ست سنين وبنى بها وهي بنت تسع سنين : اسناده حسن.
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে (হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম) উনার আক্বদ বা শাদী মুবারক সম্পন্ন হয় যখন উনার বয়স মুবারক ছিল ৬ বছর। আর তিনি ৯ বছর বয়স মুবারকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! এ হাদীছ শরীফ উনার সনদ হাছান ছহীহ। (মুসনাদু আবী ইয়া’লা তাবে’ মুসনাদে হযরত আয়িশা আলাইহাস সালাম, ৮ম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা)

Thursday, June 8, 2017

সুওয়ালঃইনজেকশন নিলে রোযা ভংগ হবে কিনা ?


জাওয়াবঃ

জি হ্যাঁ । ইনজেকশন নিলে অবশ্যই রোযা ভংগ হবে

ফতোয়ার কিতাবের দলিল
১৷ফতোয়ায়ে আলমগীরী-
و من احتقن .... افطر

অর্থঃ " এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়… তাহলে রোযা ভঙ্গ হবে (আলমগীরী ১/২০৪)
অনুরূপ ফতোয়ায়ে শামীতেও আছে৷

২৷ বাহরুর রায়িক, ২/২৭৮ পৃঃ,
و اذا احتقن.... افطر لقو له عليه الصلاة و السلام الفطرمما دخل ر ليس محا خرج
অর্থঃ "যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়… তাহলে রোযা ভংগ হবে ৷ কারণ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন- "কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভংগ হবে এবং বের হলে রোযা ভংগ হবে না ৷"

৩৷হিদায়া মা'য়াদ দিরায়া ১/২২০ পৃঃ,
ومن احتقن ....افطر لقو له صلى الله عليه و سلم الفطر مما دخل
অর্থঃ " এবং যদি কোন ব্যক্তি ইনজেকশন নেয়… তাহলে রোযা ভংগ হবে ৷ কারণ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন- "কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে রোযা ভংগ হবে ৷

(ফতওয়া বিভাগ
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদরাসা, ঢাকা)

Thursday, April 27, 2017

সুওয়ালঃ তাবীজ ব্যবহার করার হুকুম কি?

জাওয়াবঃ


হাদীস শরীফ থেকে এ কথা প্রতিয়মান হয় যে, জাহেলী যুগে বিভিন্ন অসুস্থতা বালা মুসিবত ইত্যাদির জন্য ঝাড় ফুঁক করা তাবিজ ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রচলন ছিল। তাদের অনেকে শিরকী কালাম ইত্যাদি দ্বারা ঝাড় ফুঁক করত। তাবিজ ইত্যাদি গলায় ঝুলিয়ে রেখে তার উপর ভরসা করত। আল্লাহপাক উনার প্রতি আরোগ্যের বিশ্বাস না রেখে শুধুমাত্র তাবিজের উপর বিশ্বাস রাখত। তারা মনে করত এই তাবিজই তাকে আরোগ্য দান করবে। এ জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরণের ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করতে নিষেধ করেছিলেন।

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَلا أَتَمَّ اللَّهُ عَلَيْهِ
হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি রক্ষাকবচ ঝুলিয়ে রাখল, আল্লাহ পাক তাকে সম্পন্ন করবেন না৷ অর্থাৎ তাকে সুস্থ করবেন না৷ (মুসনাদে আবী ইয়ালা ৩/২৯৫ হা. ১৭৫৯ মুসনাদে উকবা ইবনে আমের জুহানী।)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় ঝাড় ফুক করা, রক্ষাকবচ ব্যবহার করা ও স্বামী বা স্ত্রীকে (ঝাড় ফুঁক বা রক্ষকবচের মাধ্যমে) বশিভুত করা শিরক৷ ( আবু দাউদ ৪/১১ হা. ৩৮৮৫ চিকিৎসা অধ্যায়, তাবিজ ঝুলিয়ে রাখা পরিচ্ছেদ।)

(تميمة) তামিমাতুন শব্দের তাহকীকঃ

التميمة خرزة رقطاء تنظم في السير ثم يعقد في العنق. –
[খারাযাতুন- পুঁথি যাকে মোতির মালায় গাঁথা হয়৷ সীসা বা কাঁচের টুকরা, আংটির পাথর৷ রাক্বতাউ- ফিতনা ফাসাদ৷ তুনযামু- গাঁথা হয়৷ফিস সায়রি- চামড়ার লম্বা টুকরা, ফিতা, বেল্ট৷ছুম্মা- অতপর৷ইউক্বাদু- বাঁধা হয়, গিঁঠ দেওয়া হয়৷ফিল উনুক্বি- ঘাড়ে৷]অতএব অর্থ হবে,
বিভিন্ন প্রকারের ফিতনা ফাসাদ দূর করতে ব্যবহৃত পুঁথি যা চামড়ার লম্বা টুকরায় বা ফিতায় গাঁথা হয়, অতপর ঘাড়ে বাঁধা হয়৷ অর্থাৎ রক্ষাকবচ৷( আলমুখাসসিস ফিল লুগাহ ৪/২১ নৃত্য করা পরিচ্ছেদ৷ আলকামূসুল মুহিত ১/১৪০০)

قال الازهري التمائم واحدها تميمة وهي خرزات كان الاعراب يعلقونها علي اولادهم يتقون بها النفس اي العين بزعمهم وهو باطل. আযহারী বলেন, التمائم আততামায়েম শব্দ বহুবচন, একবচন হলো, تميمة তামীমাতুন৷ আর তা হলো, পুঁথি বা সীসার টুকরা, আরববাসীরা তাদের সন্তানদেরকে ঐ পুঁথি বা সীসার টুকরা ঝুলিয়ে দিতেন, যা তাদের বাতিল ধারণা মতে বদ নসরুল বা কুদৃষ্টি থেকে বেচে থাকত৷(আলমুগরিব ফি তারতীবিল মুরিব 1/245 তা পরিচ্ছেদ, তা ও মীম৷)

সুতরাং تميمة তামীমাতুন অর্থ হলো, বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শিরকযুক্ত ধারণীয় মন্ত্রপূত কবচ, যা আরববাসীরা শিশুদের গলায় দিতেন ও তারা ধারণা করতেন যে, এ রক্ষাকবচ দ্বারা তাদের সন্তানগণ কুদৃষ্টি ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকবে৷
(এ হাদীস দুটি সম্পর্কে শেষের দিকে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে)
বিভিন্ন বালা মুসিবতের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন দুআও শিক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাসুল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদিতে শিরক জাতীয় কিছু না থাকলে তা করার অনুমোদন দিয়েছেন।

পরবর্তীতে ঝাড় ফুঁক ও তাবিজের অনুমোদনঃ

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَخَّصَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لأَهْلِ بَيْتٍ مِنَ الأَنْصَارِ فِى الرُّقْيَةِ مِنَ الْحُمَةِ.
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আনসার পরিবারের লোকদের বিষক্রিয়ার ঝাড় ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৪ হা. ৫৫৫৫ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)
جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ أَرْخَصَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- فِى رُقْيَةِ الْحَيَّةِ لِبَنِى عَمْرٍو.
قَالَ أَبُو الزُّبَيْرِ وَسَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ يَقُولُ لَدَغَتْ رَجُلاً مِنَّا عَقْرَبٌ وَنَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم-. فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرْقِى قَال مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ

হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু আমর গোত্রের লোকদের সর্প দংশনে ঝাড় ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। আবু যুবাইর বলেন, আমি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহকে রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনাকে বর্ণনা করতে শুনেছি, আমাদের একজনকে বিচ্ছু দংশন করল। আমরা তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে বসা ছিলাম। এক ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম! আমি ঝেড়ে দেই? তিনি বলেন, তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তা করে।(মুসলিম শরীফ ৭/২৬৭ হা. ৫৫৬৪ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

শিরক না হওয়ার শর্তে ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করার অনুমোদনঃ

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِىِّ قَالَ كُنَّا نَرْقِى فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تَرَى فِى ذَلِكَ فَقَالَ ্র اعْرِضُوا عَلَىَّ رُقَاكُمْ لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ .
হযরত আউফ ইবনে মালেক আশজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জাহেলিয়াতের যুগে আমরা ঝাড় ফুঁক করতাম। আমরা আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম! এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বলেন তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার সামনে পেশ কর। ঝাড় ফুঁকে যদি শিরকের শব্দ না থাকে তাহলে এতে কোন সমস্যা নেই।
(মুসলিম শরীফ ৭/২৬৮ হা. ৫৫৬৯ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ كَانَ لِى خَالٌ يَرْقِى مِنَ الْعَقْرَبِ فَنَهَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الرُّقَى – قَالَ – فَأَتَاهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّكَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقَى وَأَنَا أَرْقِى مِنَ الْعَقْرَبِ. فَقَالَ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ
হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার এক মামা বিচ্ছুর বিষ ঝাড়তেন। অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করেন। তিনি তার কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করেছেন। আমি বিচ্ছুর বিষ ঝেড়ে থাকি। তিনি বললেন তোমাদের যে কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তার উপকার করে। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৭ হা. ৫৫৬৫ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- عَنِ الرُّقَى فَجَاءَ آلُ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّهُ كَانَتْ عِنْدَنَا رُقْيَةٌ نَرْقِى بِهَا مِنَ الْعَقْرَبِ وَإِنَّكَ نَهَيْتَ عَنِ الرُّقَى. قَالَ فَعَرَضُوهَا عَلَيْهِ. فَقَالَ ্র مَا أَرَى بَأْسًا مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ গ্ধ.
হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করলেন। আমর ইবনে হাযম গোত্রের লোকেরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এসে আরজ করল ইয়া রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাছে কিছু মন্ত্র আছে। এ দিয়ে আমরা বিষ ঝেড়ে থাকি। আপনি তো ঝাড় ফুঁক করতে নিষেধ করেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারা মন্ত্রগুলো উনার সামনে পেশ করল। তিনি বললেন এতে খারাপ তো কিছু নেই। তোমাদের যে কেউ তাঁর ভাইয়ের উপকার করতে পারে সে যেন তা করে। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৮ হা. ৫৫৬৮ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, বদ নজর, ফুসকুড়ি, ব্রণ, সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির দংশনে ঝাড় ফুঁক করানো উত্তম।)

ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করে বিনিময় গ্রহণও করাও বৈধঃ

عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ نَاسًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانُوا فى سَفَرٍ فَمَرُّوا بِحَىٍّ مِنْ أَحْيَاءِ الْعَرَبِ فَاسْتَضَافُوهُمْ فَلَمْ يُضِيفُوهُمْ. فَقَالُوا لَهُمْ هَلْ فِيكُمْ رَاقٍ فَإِنَّ سَيِّدَ الْحَىِّ لَدِيغٌ أَوْ مُصَابٌ. فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ نَعَمْ فَأَتَاهُ فَرَقَاهُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَبَرَأَ الرَّجُلُ فَأُعْطِىَ قَطِيعًا مِنْ غَنَمٍ فَأَبَى أَنْ يَقْبَلَهَا. وَقَالَ حَتَّى أَذْكُرَ ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم-. فَأَتَى النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ. فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَاللَّهِ مَا رَقَيْتُ إِلاَّ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ. فَتَبَسَّمَ وَقَالَ وَمَا أَدْرَاكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ ثُمَّ قَالَخُذُوا مِنْهُمْ وَاضْرِبُوا لِى بِسَهْمٍ مَعَكُمْ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একদল সাহাবী সফরে ছিলেন। তারা আরবের কোন গ্রাম দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তাদের কাছে আতিথ্য চাইলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করল। তারা বলল, তোমাদের কেউ কি ঝাড় ফুঁক জানে? আমাদের এই গ্রামের সরদারকে বিচ্ছু দংশন করেছে। এক সাহাবী বললেন, হ্যাঁ! আমি ঝাড় ফুঁক জানি। অতএব তিনি তাদের সাথে গেলেন এবং সুরা ফাতিহা পাঠ করে তাকে ঝাড়লেন। সে ভাল হয়ে গেল। তাকে এক পাল বকরী দেয়া হল। কিন্তু তিনি তা গ্রহন করলেন না এবং বললেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করে নেই। অতএব তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে এসে সবকিছু বর্ণনা করলেন এবং বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্যকিছু কোন দুয়া পড়িনি। তিনি মুচকি হেসে বললেন এটা যে দুয়া তা তুমি কিভাবে জানলে? অতপর তিনি বললেন, তাদের থেকে বকরি গ্রহণ কর এবং আমাকেও একটা ভাগ দিও। (মুসলিম শরীফ ৭/২৬৯ হা. ৫৫৭০ কিতাবুস সালাম, পরিচ্ছেদ, কুরআন এবং দুআর সাহায্যে ঝাড় ফুঁক করে বিনিময় নেয়া জায়েয।)

তাবিজ ঝুলানোও হাদীস থেকে প্রমাণিতঃ
أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال إذا فرغ أحدكم في النوم فليقل أعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وعقابه وشر عباده ومن همزات الشيطان وأن يحضرون فإنها لن تضره قال وكان عبد الله بن عمرو يعلمها من بلغ من ولده ومن لم يبلغ منهم كتبها في صك ثم علقها في عنقه
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ঘুমাবে তখন বলবে-
أعوذ بكلمات الله التامات من غضبه وعقابه وشر عباده ومن همزات الشيطان وأن يحضرون
তবে তার কোন প্রকার ক্ষতি হবে না।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার উনার প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানকে দুআটি শিক্ষা দিতেন। আর অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এর জন্য একটি কাগজে লিখে তার গর্দানে ঝুলিয়ে দিতেন।
ইমাম তিরমিযি রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। (তিরমিযি ৫/৪৫১ হা. ৩৫২৮ দাওয়াত অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ৯৪। আবু দাউদ ৪/১৮ হা. ৩৮৯৫ চিকিৎসা অধ্যায়, মন্ত্রপড়া অনুচ্ছেদ।)

হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার তাবিজ ব্যবহার নিষিদ্ধ এর হাদীসঃ

عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ الْجُهَنِيِّ ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : مَنْ تَعَلَّقَ تَمِيمَةً فَلا أَتَمَّ اللَّهُ عَلَيْهِ
হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি রক্ষাকবচ ঝুলিয়ে রাখল, আল্লাহ তায়ালা তাকে সম্পন্ন করবেন না৷ অর্থাৎ তাকে সুস্থ করবেন না৷ (মুসনাদে আবী ইয়ালা ৩/২৯৫ হা. ১৭৫৯ মুসনাদে উকবা ইবনে আমের জুহানী।)
হাদীসটির সনদে একজন বর্ণনাকারী হলেন খালেদ ইবনে উবায়দ৷ তিনি মাজহুল অপরিচিত৷ অতএব হাদীসটির রাবী সিকাহ নয়৷
যেহেতু অসুস্থতা ও বিভিন্ন বালা মুসিবত আল্লাহর তরফ থেকেই আসে এবং তার আরোগ্যও তিনিই করেন৷ যেহেতু রক্ষাকবচ ব্যবহার করা হয় এবং তার উপর ভরসা করা হয়, সেহেতু বলেছেন তাকে আল্লাহ আরোগ্য করবেন না৷
وفي الحديث من علق تميمة فلا اتم الله له. ويقال هي خرزة. وأما المعاذات إذا كتب فيها القرآن وأسماء الله عز وجل فلا بأس بها. হাদীসে বর্ণিত, من علق تميمة فلا أتم الله له. তামীমাহকে পুঁথি বলা হয়৷ তবে তাহাদের যদি কুরআন বা আল্লাহর নাম লেখা হয়, তবে তাতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই৷ মুকতারুস সিহাহ 1/83 তা পরিচ্ছেদ৷ আস সিহাহ তাজুল লুগাহ ওয়া সিসাহুল আরাবিয়্যাহ 7/180৷

এ ছাড়াও হাদীসটির বর্ননা ত্র“টিযুক্ত
عن عقبة (من تعلق تميمة فلا أتم الله له) أعله ابن حبان بأنه له أحاديث مناكير يتفرد بها عن عقبة, فمثله لا يحمل تفرده عن عقبة, فيعل هذا الخبر بمثل هذه العلة, ومنهم من يعله بأنه سيء الحفظ يصيب ويخطيء, وهناك غير ذلك.
হযরত উকবা ইবনে আমের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলায় আল্লাহ তায়ালা তাকে সুস্থ করবেন না।

ইবনে হিব্বান রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদীসটিকে মুআল্লাল তথা ত্র“টিযুক্ত বলেছেন। কেননা তার তার অধিক মুনকার হাদীস রয়েছে। আর উকবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে এই হাদীসটি একক বর্ণনা। এ জাতীয় একক বর্ণনা উকবা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে গ্রহণ করা যায়না। আর তা এই ত্র“টিতে ত্র“টিযুক্ত। অনেকে একে মুখস্থ শক্তির দুর্বলতা কখনও সঠিক আর কখনও বেঠিক হওয়ার কারণে ত্র“টিযুক্ত মনে করেন। অথচ এখানে এমন নয়। (শরহুল মুকিযা ১/২৭)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার এর ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি শিরক এর হাদীসঃ

إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ
إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি যে, নিশ্চয় ঝাড় ফুঁক করা তাবিজ করা ও স্বামী বা স্ত্রীকে (ঝাড় ফুঁক বা তাবিজের মাধ্যমে) বশিভুত করা শিরক।
(আবু দাউদ ৪/১১ হা. ৩৮৮৫ চিকিৎসা অধ্যায়, তাবিজ ঝুলিয়ে রাখা পরিচ্ছেদ।)

হাদীসের পরিপূর্ণ অংশ দেখলে বুঝা যায় যে, তিনিও ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করা জায়েয মনে করতেন। যেহেতু তার স্ত্রীর চোখে সমস্যা দেখা দেয়ার কারণে একজন ইহুদী ব্যাক্তির কাছ থেকে ঝাড় ফুঁক করেছেন। সে কারণে তিনি এমন বলেছেন।
পরবর্তী হাদীসের অংশ হল,
قَالَتْ قُلْتُ لِمَ تَقُولُ هَذَا وَاللَّهِ لَقَدْ كَانَتْ عَيْنِى تَقْذِفُ وَكُنْتُ أَخْتَلِفُ إِلَى فُلاَنٍ الْيَهُودِىِّ يَرْقِينِى فَإِذَا رَقَانِى سَكَنَتْ. فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ إِنَّمَا ذَاكِ عَمَلُ الشَّيْطَانِ كَانَ يَنْخَسُهَا بِيَدِهِ فَإِذَا رَقَاهَا كَفَّ عَنْهَا إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِى كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ ্র أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
হযরত আব্দল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার এর স্ত্রী যায়নাব বললেন, আমি বললাম- আপনি এমন (নিশ্চয় ঝাড় ফুঁক করা তাবিজ করা ও স্বামী বা স্ত্রীকে {ঝাড় ফুঁক বা তাবিজের মাধ্যমে} বশিভুত করা শিরক) বললেন কেন? আল্লাহর কসম! আমার চোখে সমস্যা ময়লা নির্গত হয়। চক্ষু লাফালাফি করে। এ সমস্যা অনুভব হলে ওমুক ইহুদীকে আমাকে ঝাড় ফুঁক করতে বলি, সে আমাকে ঝাড় ফুঁক করলে আমার চক্ষু শান্ত হয়। ভাল হয়। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার বলেন, ইহা শয়তানের কাজ। সে তার হাত দিয়ে চোখে গুতাগুতি করে। যখন ঝাড় ফুঁক করে তখন সে বিরত থাকে। আর তাই তোমার জন্য যথেষ্ট হল যে, তুমি বলবে যেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন এই দুআটি।
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আর তাই হযরত আব্দল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ঝাড় ফুঁককে অপসন্দ করতেন।

কারণ তিনি তার স্ত্রীকে বলেছেন-
إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكِ أَنْ تَقُولِى كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
আর তাই তোমার জন্য যথেষ্ট হল যে, তুমি বলবে যেভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন এই দুআটি।
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِى لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا
তবে তিনিও কুরআন বা আল্লাহর যিকির দ্বারা ঝাড় ফুঁক করাকে জায়েয মনে করতেন।

তবে যেহেতু তার স্ত্রী যায়নাব ইহুদী থেকে ঝাড় ফুঁক করিয়েছিলেন। সুতরাং তা শিরকি শব্দ বা যাদু ইত্যাদি হওয়ার কারণে তিনি এটি শয়তানের আমল বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা তখন সাধারণত সকলেই শিরকি কালাম দ্বারা ঝাঁড়, ফুঁক, তাবিজ ইত্যাদি করত।

যেমন বর্ণিত হয়েছে-
وروى ابن وهب عن يونس بن يزيد عن ابن شهاب قال بلغني عن رجال من أهل العلم أنهم كانوا يقولون إنه نهى عن الرقي حتى قدم المدينة وكان الرقي في ذلك الزمن فيها كثير من كلام الشرك فلما قدم المدينة لدغ رجل من أصحابه قالوا يا رسول الله قد كان آل حزم يرقون من الحمة فلما نهيت عن الرقى تركوها فقال ادعوا لي عمارة وكان قد شهد بدرا قال اعرض علي رقيتك فعرضها عليه ولم ير بها بأسا وأذن له فيها
ইবনে ওয়াহহাব থেকে, তিনি ইউনুস ইবনে ইয়াযিদ থেকে তিনি ইবনে শিহাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহলে ইলমের অনেক ব্যক্তি আমার নিকট পৌঁছিয়েছে যে, তারা বলতেন, তাদেরকে ঝাঁড়, ফুঁক ইত্যাদি থেকে নিষেধ করা হয়েছে মদিনায় আগমন করা পর্যন্ত। আর সে যুগে ঝাঁড় ফুক, তাবিজ ইত্যাদিতে শিরকি কালাম থাকত, যখন মদিনায় এলেন, তাদের সাথীদের মধ্যে একজন ব্যক্তি বিষক্রিয়ায় দংশন করা হল, তারা বলল ইয়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর ইবনে হাযম গোত্রের লোকেরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাঁড় ফুঁক ইত্যাদি করতে পারে। আপনি নিষেধ করা থেকে তারা তা ছেড়ে দিয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার নিকট উমারা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে ডাক, তিনি বদর যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন, অতপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মন্ত্রগুলোকে পেশ কর, তিনি তা পেশ করলে তাতে খারাপ কিছু দেখলেন না। অতপর অনুমতি দিলেন।(উমদাতুল কারী ৩১/৩৬৮ চিকিৎসা অধ্যায়, বিচ্ছু দংশন পরিচ্ছেদ।)
অতএব বুঝা গেল সে যুগে যেহেতু শিরকি কালাম দ্বারা তাবিজ করা হত, সে কারণেই হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার তা থেকে নিষেধ করেছেন।

عن ابن مسعود رضي الله عنه أنه كان يكره الرقي إلا بالمعوذات قلت قال الطبري هذا حديث لا يجوز الاحتجاج بمثله إذ فيه من لا يعرف ثم إنه لو صح لكان إما غلطا أو منسوخا بقوله وما أدراك أنها رقية
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদিকে অপসন্দ করতেন। তবে আল্লাহর নাম বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শিক্ষা দেয়া দুআসমুহ পড়াকে পসন্দ করতেন।

আমি বলি- ইমাম তবরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন এই হাদীস দ্বারা দলিল দেয়া জায়েয নয়। কেননা এতে বর্ণনাকারী অপরিচিত। এরপরও যদি একে সঠিক ধরাও হয়, তবে তা ভুল হবে বা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হু্যূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা
وما أدراك أنها رقية “এটা যে মন্ত্র তা তুমি কিভাবে জানলে?” দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।(উমদাতুল কারী ৩১/৩৫৭)

সারসংক্ষেপঃ
উপরোক্ত হাদীসের আলোচনা দ্বারা এ কথা প্রতিয়মান হল যে, ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি করা বিষয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এগুলো না করা বিষয়েও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি শিরক হলে এগুলো নিষিদ্ধ হবে। আর নিষিদ্ধ বিষয়ের হাদীসগুলিও সহীহ নয়। ত্রুটিযুক্ত।
তবে ঝাড় ফুঁক তাবিজে শিরক জাতীয় শব্দ না হলে ঝাড় ফুঁক করা যাবে এবং তাবিজও ব্যবহার করা যাবে। কোন ব্যাক্তি ঝাড় ফুঁক ও তাবিজ এর উপর ভরসা না করে আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং তাতে শিরক জাতীয় কিছুই না থাকলে ব্যবহার করতে পারবে। এতে কোন প্রকার সমস্যা নেই।
আল্লামা ইবনে হজর আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফতহুল বারী তে লিখেন-
وقد أجمع العلماء على جواز الرقي عند اجتماع ثلاثة شروط أن يكون بكلام الله تعالى أو بأسمائه وصفاته وباللسان العربي أو بما يعرف معناه من غيره وأن يعتقد أن الرقية لا تؤثر بذاتها بل بذات الله تعالى
ওলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন যে, ঝাড় ফুঁক জায়েয হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত বিদ্যমান থাকতে হবে।
১. আল্লাহর কালাম বা উনার নাম বা উনার গুণাবিশিষ্ট নাম হতে হবে।
২. আরবী ভাষা হতে হবে বা অন্য ভাষা হলে তার অর্থ জানতে হবে।
৩. এবং বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদি নিজস্ব কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা। বরং আল্লাহ তাআলাই প্রভাব ফেলেন। অর্থাৎ ঝাড় ফুঁক তাবিজ কখনও আরোগ্য দিতে পারেনা। বরং আরোগ্যদানকারী স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই।

ফতহুল বারী ১০/১৯৫

সুতরাং শরীয়তের আলোকে ঝাড় ফুঁক তাবিজ ইত্যাদিতে উপরের শর্ত বিদ্যমান থাকলে আর্থাৎ শিরক জাতীয় কিছু না থাকলে এবং উহার উপর ভরসা না থাকলে ঝাড় ফুঁক ও তাবিজ ব্যবহার করা জায়েয হবে। এতে কোন প্রকার সমস্যা নেই। এমনকি শিরক বা হারামও নয়। যারা এমন (শিরক বা হারাম) বলে থাকে তাদের কথা সঠিক নয়।
আল্লাহ সকলকে বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Saturday, April 15, 2017

সুওয়াল : আখিরী চাহার শোম্বাহ কি? এ সম্পর্কে জানিয়ে বাধিত করবেন।


জাওয়াব : 

 


‘আখিরি’ শব্দটির অর্থ- শেষ। আর ‘চাহার শোম্বাহ’ শব্দ এর অর্থ- আরবিয়া বা বুধবার। ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ বলতে ছফর মাসের শেষ আরবিয়া বা বুধবারকে বুঝানো হয়ে থাকে। মূলত এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য মহা খুশির দিন।
এ মুবারক দিনটি সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, পবিত্র ১১ হিজরী সনের মুহররমুল হারাম শরীফ উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত করার বিষয়ে পবিত্র ওহী মুবারক করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত মুবারক করেন এবং পবিত্র জিয়ারত মুবারক শেষে উনার ছের মুবারকে মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করেন। এর ৮/১০ দিন পর তিনি আবার ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। অতঃপর পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার তৃতীয় সপ্তাহে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী মুবারক জিয়ারত মুবারক করার বিষয়ে পবিত্র ওহী মুবারক করেন। অতঃপর তিনি পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী জিয়ারত মুবারক করেন। পবিত্র জিয়ারত মুবারক শেষে তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ তাশরীফ মুবারক রাখেন এবং তিনি ‘ওয়াহ রাসাহু’ ‘ওয়াহ রাসাহু’ অর্থাৎ আমার ছের মুবারক, ছের মুবারক একথা বলে উনার ছের মুবারক উনার মারীদ্বী শান  মুবারক উনার কথা উল্লেখ করেন এবং পর্যায়ক্রমে মারীদ্বী শান মুবারক প্রকাশ পেতে থাকে। অতঃপর এই পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার ৩০ তারিখ ইয়াওমুল আরবিয়া বা বুধবার দিন সকালে তিনি ছিহ্হাতী শান মুবারক গ্রহণ করেন। ফলে ভোর বেলা ঘুম মুবারক থেকে জেগে তিনি বললেন, ‘আমার নিকট কে আছেন?’ এ কথা শুনামাত্রই উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ছুটে আসলেন এবং বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আমি হাযির আছি।’ তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! মারীদ্বী শান মুবারক ত্যাগ করে ছিহহাতী শান মুবারক গ্রহণ করার ফলে শরীর মুবারক বেশ হালকা মনে হচ্ছে।’ সুবহানাল্লাহ! এ কথা শুনে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং তাড়াতাড়ি পানি এনে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছের মুবারক ধুয়ে দিলেন এবং সমস্ত জিসিম মুবারক উনার মধ্যে পানি মুবারক ঢেলে ভালোভাবে গোসল মুবারক করিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এ সংবাদ পেয়ে অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা খিদমত মুবারকে হাযির হলেন।
অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, ‘হে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম! ঘরে কোনো খাবার আছে কি?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘জী-হ্যাঁ।’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘আমার জন্য তা নিয়ে আসুন আর আমার হযরত আওলাদ শরীফ অর্থাৎ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকেসহ অন্যান্য আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে খবর দিন। আর হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেও নিয়ে আসতে বলুন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সকলকে সংবাদ দিলেন। অতঃপর হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনিসহ অন্যান্য আওলাদ আলাইহিন্নাস সালাম উনারা এবং হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলে বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা সবাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এসে হাযির হলেন।
অতঃপর রুটি-গোশত ও সিরকা মুবারক তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ পরিবেশন করা হলো। তিনি সকলকে নিয়ে খাদ্য গ্রহণ করে খুশী প্রকাশ করলেন। সংবাদ শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও বাইরে এসে হাযির হন। কিছুক্ষণ পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাইরে এসে উনাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আমার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর আপনাদের অবস্থা কিরূপ হবে?’ এ কথা শুনে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা ব্যাকুলচিত্তে কান্না শুরু করলেন। উনাদের এ অবস্থা দেখে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্ত¡না দান করলেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে ওয়াক্তিয়া নামায আদায় করলেন। সুবহানাল্লাহ!
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীর্ঘদিন মারীদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করার পর ছিহ্হাতী শান মুবারক প্রকাশ করে মসজিদে নববী শরীফ তাশরীফ মুবারক আনেন এবং নামাযের ইমামতি করেন এই অপার আনন্দে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্øাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকে হাদিয়া পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
বর্ণিত রয়েছে যে, খুশি হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সাত হাজার দীনার, হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পাঁচ হাজার দীনার, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দশ হাজার দীনার, হযরত র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তিন হাজার দীনার, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একশত উট ও একশত ঘোড়া মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় হাদিয়া করতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুহব্বত ও সন্তুষ্টি মুবারক লাভ করেন। সুবহানাল্লাহ! আর একারণেই পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ পালন করা হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। উনাদেরকে অনুসরণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন –
وَالَّذِيْنَ اتَّبَعُوهُمْ بِاحْسَانٍ رَّضِىَ الله عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
অর্থ: “যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট।” আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين الـمهديين
 “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত মুবারক এবং আমার হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন বা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পবিত্র সুন্নত মুবারক অবশ্যই পালনীয়।” (মিশকাত শরীফ)
মূলকথা হলো- সুমহান ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’। অর্থাৎ পবিত্র ছফর শরীফ মাস উনার শেষ ইয়াওমুল আরবিয়ায়ি শরীফ বা বুধবার।  যা কুল কায়িনাতের সকলের জন্য এক সুমহান ঈদ বা খুশির দিন।  এ উপলক্ষে সকলের জন্য আবশ্যক হচ্ছে- সেই মুবারক দিনে খুশি প্রকাশ করে সাধ্যমতো হাদিয়া পেশ করা, গোসল করা, ভালো খাওয়া, অধিক পরিমাণে পবিত্র মীলাদ শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ও পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করা। এর সাথে সাথে দান-ছদক্বা করাও। আর বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিনটি পালনের সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণসহ এ মুবারক দিন উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
কেউ কেউ ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উদযাপন করাকে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! যা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও ভুল। বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে ‘পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ শরীফ’ উপলক্ষে সাধ্যমত গরিব-মিসকীনদেরকে দান-খয়রাত করা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা অত্যন্ত ফযীলত ও মর্যাদা লাভের কারণ। {দলীল: সমূহ সীরাতগ্রন্থ।}

Friday, April 14, 2017

সুওয়াল: সিলেট দরগাহ সংলগ্ন খারিজী মাদরাসা জামিয়া কাসিমুল উলূমের মুহতামিম আবুল কালাম যাকারিয়া ও সুবহানীঘাট ফুলতলী মাসলাকের মাদরাসা ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মুহম্মদ কুতুবুল আলম স্বাক্ষরিত একটি লিখিত ফতওয়া আমার হস্তগত হয়। সেখানে তারা একটি হাদীছ শরীফ ও মা লা বুদ্দা মিনহু কিতাবের বরাত দিয়ে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, “ফরয নামাযের দুই সিজদার মধ্যখানে اللهم اغفرلى وارحمنى واجبرنى واهدنى وارزقنى وعافنى وارفعنى এ দোয়াটি সম্পূর্ণটাই পড়া জায়িয। উল্লেখ্য আপনাদের বুঝার সুবিধার্থে তাদের লিখিত ফতওয়াটির ফটোকপি সুওয়ালের সাথে প্রেরণ করা হলো। এখন আমার সুওয়াল হলো-সত্যিই কি ফরয নামাযের দু’ সিজদার মধ্যখানে উক্ত দোয়াটি সম্পূর্ণ পড়া জায়িয? দলীল ভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ফরয ইবাদত নামাযকে হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

 

জাওয়াব :  

দুই সিজদার মধ্যে উক্ত দোয়াটি পড়া সম্পর্কে সিলেট দরগাহ সংলগ্ন খারিজী মাদরাসা জামিয়া কাসিমুল উলূমের মুহতামিম আবুল কালাম যাকারিয়া ও সুবহানীঘাট ফুলতলী মাসলাকের মাদরাসা ইয়াকুবিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মুহম্মদ কুতুবুল আলম যে ফতওয়া দিয়েছে তা মিথ্যা ও ভুয়া দলীলের বরাত দিয়ে ভুল, গোমরাহী ও বিদয়াতী আমলের সূচনা করার ব্যর্থ প্রয়াস বৈ কিছুই নয়। কারণ তাদের বক্তব্যে এটাই ছাবিত হয় যে, উক্ত দোয়াটি ফরয নামাযসহ সমস্ত নামাযে পড়া মুস্তাহাব। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ তাদের উল্লিখিত পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত উক্ত সম্পূর্ণ দোয়াটি আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক ফরয নামাযে পড়া যাবে না বরং উক্ত সম্পূর্ণ দোয়াটি শুধুমাত্র নফল বা তাহাজ্জুদ নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন এ প্রসঙ্গে মিশকাত শরীফ উনার শরাহ “মিরকাত শরীফ” উনার দ্বিতীয় খণ্ডের ৩২৬ পৃষ্ঠায় পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনার পর বলা হয়েছে –
وهو محمول على التطوع عندنا.
অর্থ: “ইমামুল মুহাদ্দিছীন হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, দুই সিজদার মাঝে উক্ত দোয়াটি পড়া সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা আমাদের মাযহাবে নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”
আবূ দাউদ শরীফ-এর শরাহ “বজলুল মাজহুদের” দ্বিতীয় খণ্ডের ৬৮ পৃষ্ঠায় দুই সিজদার মাঝে উক্ত দোয়া পড়া সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ খানা বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে-
وقال القارى وهو محمول على التطوع عندنا.
অর্থ: “হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক উক্ত দোয়াটি নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”
“ইবনে মাযাহ শরীফ” উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত দোয়াটি তাহাজ্জুদ নামাযে পাঠ করতেন। যেমন “ইবনে মাযাহ শরীফ” উনার ১ম জি: ৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে –
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول بين السجدتين فى صلوة الليل رب اغفرلى وارحمنى واجبرنى وارزقنى وارفعنى.
অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাহাজ্জুদ নামাযে দুই সিজদার মাঝে
رب اغفرلى وارحمنى واجبرنى وارزقنى وارفعنى.
এই দোয়াটি পড়তেন।
সর্বজন মান্য, অনুসরণীয় ও নির্ভরযোগ্য হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফিক্বাহর কিতাব “মারাকিউল ফালাহ” কিতাবের ১৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে –
ومقدار الجلوس عندنا بين السجدتين مقدار تسبيحة وليس فيه ذكر مسنون كما فى السراج وكذا ليس بعد الرفع من الركوع دعاء وما ورد فيهما محمول على التهجد كما فى مجمع الانهر.
অর্থ: “হানাফী মাযহাব মুতাবিক দুই সিজদার মাঝখানে কমপক্ষে এক তাসবীহ পরিমাণ বসা (ওয়াজিব)। এবং দুই সিজদার মাঝখানে মাসনুন কোন যিকর (দোয়া) নেই। যেমন “সিরাজে” বর্ণিত আছে। অনুরূপ রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর কোন দোয়া নেই। আর রুকুর পর এবং দুই সিজদার মাঝখানে যে সকল দোয়াগুলি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে তা তাহাজ্জুদ (নফল) নামাযের জন্য প্রযোজ্য। অনুরূপ “মাজমাউল আনহুর” কিতাবে বর্ণিত আছে।
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব “রদ্দুল মুহতার” কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ডের ২১৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে,
وبين السجدتين اللهم اغفرلى وارحمنى وعافنى واهدنى وارزقنى …….. محمول على النفل اى تهجدا او غيره.
অর্থ : “দুই সিজদার মাঝে-
اللهم اغفرلى وارحمنى وعافنى واهدنى وارزقنى.
এই দোয়াটি পড়া … তাহাজ্জুদ নামায অথবা অন্যান্য নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
“মাজমাউল আনহুর” কিতাবের প্রথম খন্ডের ৯৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে –
وليس بين السجدتين ذكر مسنون عندنا وكذا بعد رفعه وما ورد فيهما من الدعاء فمحمول على التهجد.
অর্থ: “আমাদের হানাফী মাযহাবে দুই সিজদার মাঝে মাসনূন কোন যিকির (দোয়া) নেই। অনুরূপ রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর কোন দোয়া নেই।” আর রুকুর পর এবং দুই সিজদার মাঝখানে যে সকল দোয়াগুলি পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে তা তাহাজ্জুদ নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
“মিশকাত শরীফ-উনার” ৮৪ পৃষ্ঠায় বাইনাস সুতুরে উল্লেখ আছে-
وهو محمول على التطوع عندنا.
অর্থ: “দুই সিজদার মাঝে উক্ত দোয়াটি পড়া সম্পর্কিত পবিত্র হাদীছ শরীফখানা আমাদের মাযহাবে নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”
অনুরূপ “ইলাউস সুনান” কিতাবের তৃতীয় খণ্ডের ৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে –
ولو تركه رأسا لايلام عليه فان هذا الذكر ورد فى صلاة الليل دون المكتوبة كما يظهر من مجمع الاحاديث ولذا قال الشرنبلالى فى نور الايضاح وليس فيه اى فى الجلوس بين السجدتين ذكر مسنون والوارد فيه محمول على التهجد.
অর্থ: “যদি উক্ত দোয়াটি একেবারেই না পড়ে, তাহলে সে তিরস্কৃত হবে না। নিশ্চয়ই এ দোয়াটি তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য বর্ণিত হয়েছে, ফরয নামাযের জন্য নয়। যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সমষ্টিগত বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট। এ জন্য আল্লামা শরাম্বলালী রহমতুল্লাহি আলাইহি “নূরুল ইযাহ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, দুই সিজদার মাঝের বৈঠকে কোন মাসনূন দোয়া নেই। আর এ সম্পর্কিত বর্ণনাগুলি তাহাজ্জুদ নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।”
“গায়াতুল আওতার” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে –
اور دونوں سجدوں کے درمیاں کوئی ذکر مسنون نھیں اور اسیطرح رکوع سے سر اٹھا نے کے بعد کوئی دعا مسنون نھیں … اور جو ذکر یا دعائیں کہ اں مواضع میں وارد ھیں وہ نفل پر محمول ھیں.
অর্থ: “দুই সিজদার মাঝখানে মাসনূন কোন যিকর (দোয়া) নেই। অনুরূপ রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর মাসনূন কোন দোয়া নেই। ………. আর রুকুর পর এবং দুই সিজদার মাঝখানে যে সকল দোয়াগুলি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে তা নফল নামাযের জন্য প্রযোজ্য।”
“দুররুল মুখতার শরহে তানবীরিল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
وليس بينهما ذكر مسنون وكذا ليس بعد رفعه من الركوع دعاء ………. وما ورد محمول على النفل اى تهجدا او غيره.
অর্থ: দুই সিজদার মাঝে মাসনূন কোন যিকর (দোয়া) নেই। অনুরূপ রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর কোন দোয়া নেই। …….. আর রুকুর পর এবং দুই সিজদার মাঝখানে যে সকল দোয়াগুলি বর্ণিত হয়েছে, তা নফল নামাযের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝে বর্ণিত দোয়াগুলি তাহাজ্জুদ নামায অথবা অন্যান্য নফল নামাযে পড়া যাবে।
“মালাবুদ্দা মিনহু” কিতাবের ৪৮ পৃষ্ঠার ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
قوله وبخواند اللهم الخ در در مختار گوید وليس بينهما ذكر مسنون على الـمذهب وما ورد محمول على النفل يعنى در جلسه ذكر مسنون موافق مذاهب نیست وانچہ وارد شده محمول بر نفل ست.
অর্থ: দুই সিজদার মাঝখানে
اللهم اغفرلى وارحمنى واهدنى وارزقنى وارفعنى
এই দোয়াগুলো পড়ার ব্যাপারে দুররুল মুখতার কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হানাফী মাযহাবে দুই সিজদার মাঝখানে মাসনুন যিকির দোয়া) নেই। আর পবিত্র হাদীছ শরীফে যে সকল দোয়াগুলো বর্ণিত হয়েছে তা নফল নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
হ্যাঁ, শাফিয়ী, হাম্বলী ও অন্যান্য মাযহাবে ফরয, নফল উভয় নামাযেই উক্ত দোয়াটি পাঠ করা জায়িয। যেমন, “তিরমিযী শরীফ” উনার ১ম খণ্ডের ৩৮ পৃষ্ঠায় উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এই দোয়াটি শাফিয়ী, হাম্বলী ইত্যাদি মাযহাবে ফরয নামাযেও পাঠ করা জায়িয রয়েছে। যেমন-
وبه يقول الشافعى واحمد واسحق يرون هذا جائزا فى الـمكتوبة والتطوع.
অর্থ: “ইমাম শাফেয়ী, আহমদ ও ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বলেন, “ইহা (অর্থাৎ উক্ত দোয়াটি) ফরয ও নফল নামাযের দুই সিজদার মাঝে পড়া জায়িয রয়েছে।” অনুরূপ তিরমীযী শরীফ উনার শরাহ “আরিদাতুল আহওয়াজী” কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ডের ৮১ পৃষ্ঠায়ও উল্লেখ আছে।
মোটকথা হলো- শাফিয়ী, হাম্বলী ও অন্যান্য মাযহাবে ফরয নামাযের দুই সিজদার মাঝে উক্ত দোয়াটি পড়া জায়িয রয়েছে। আর আমাদের হানাফী মাযহাবের ফতওয়া মুতাবিক ফরয নামাযে দুই সিজদার মাঝে উক্ত দোয়াটি পাঠ করলে ফরয বা রোকন আদায়ে তা’খীর বা বিলম্ব হওয়ার কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে। সুতরাং আমাদের মাযহাবে উক্ত দোয়াটি সম্পূর্ণটা পড়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে শামীর” দ্বিতীয় খণ্ডের ২১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে –
لو اطال هذه الجلسة او قومة الركوع اكثر من تسبيحة بقدر تسبيحة ساهيا يلزمه سجود السهو.
অর্থ: “যদি দুই সিজদার মাঝে এবং রুকু থেকে দাঁড়ানোর পর এক তাসবীহ পরিমাণের চেয়ে বেশি বিলম্ব করে তাহলে ওয়াজিব তরক হবে এবং এতে সাহু সিজদা আবশ্যক হবে।
অতএব, উক্তরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, উক্ত দোয়াটি ফরয নামাযের দুই সিজদার মাঝে পড়া যাবে না বরং শুধুমাত্র নফল ও তাহাজ্জুদ নামাযের দুই সিজদার মাঝে উক্ত দোয়াটি পড়া যাবে। সুতরাং আবুল কালাম যাকারিয়া ও কুতুবুল আলম জিহালতপূর্ণ ও প্রতারণামূলক ফতওয়া প্রদান করে মুফতী খেতাবের পরিবর্তে মুফতে খিতাবের হাক্বীক্বী মিছদাক হয়েছে। তবে তাদের জন্য এ ভুল মাসয়ালার সংশোধনী দিয়ে খালিছ তওবা ইস্তিগফার করার সুযোগ রয়েছে। অন্যথায় প্রদত্ত ভুল মাসয়ালা আমলকারীর সমূদয় গুণাহর বোঝা তাদের কাঁধেই বর্তাবে।

{দলীলসমূহ: (১) তিরমীযী শরীফ, (২) আবূ দাউদ শরীফ, (৩) ইবনে মাযাহ শরীফ, (৪) নাসাঈ শরীফ, (৫) মিশকাত শরীফ, (৬) মিরকাত শরীফ, (৭) ই’লাউস সুনান, (৮) বজলুল মজহুদ, (৯) মসনদে আহমদ, (১০) মুসতাদরিকে হাকিম, (১১) বায়হাকী শরীফ, (১২) আরিদাতুল আহওয়াজী, (১৩) তানবীরুল আবছার, (১৪) আলমগীরী, (১৫) হিন্দিয়া, (১৬) শামী, (১৭) দুররুল মুখতার, (১৮) রদ্দুল মুহতার, (১৯) গায়াতুল আওতার, (২০) হাশিয়ায়ে তাহতাবী, (২১) খানিয়া, (২২) মুহীত, (২৩) শরহে মুনিয়া, (২৪) খাযায়িন, (২৫) নাহরুল ফায়িক, (২৬) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ, (২৭) সিরাজুল ওয়াহহাজ, (২৮) মারাকিউল ফালাহ, (২৯) মাজমাউল আনহুর, (৩০) নুরুল ইজাহ, (৩১) বাহারে শরীয়ত, মালা বুদ্দা মিনহু ইত্যাদি।}

সুওয়াল: উছমান গণী ছালেহী মৌলুভী নামের এক ব্যক্তির বক্তব্য হচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন দিন সবুজ পাগড়ী পরিধান করেননি এবং সবুজ পাগড়ী সম্পর্কে কোন হাদীছ শরীফও বর্ণিত নেই। উক্ত মৌলভীর বক্তব্য কি সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: 

 

সুওয়ালে উল্লেখিত মৌলভী পরিচয়ধারী ব্যক্তির বক্তব্য মোটেও সঠিক নয়। তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যার শামিল। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা বলার অর্থ হচ্ছে কুফরী করা। সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া হলো যে কুফরী করে সে কাফির হয়। আর ঈমানদার দাবিদার ব্যক্তি কুফরী করলে সে মুরতাদ হয়। কাফির ও মুরতাদের জায়ে ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম।
নাউযুবিল্লাহ! যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
من كذب على متعمدا فليتبوا مقعده من النار
অর্থ: যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বা ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করলে, অবশ্যই সে তার বাসস্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল। (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে অথবা উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ অর্থাৎ উনার ক্বওল বা কথা মুবারক, ফে’ল বা কাজ মুবারক এবং তাকরীর বা সমর্থন ও অনুমোদন মুবারক সম্পর্কে যে মিথ্যা বললো, সে কুফরী করলো এবং এ কুফরীর পরিণতি হচ্ছে জাহান্নাম।
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত মাখলূক্ব বা সৃষ্টি এবং সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন সকলের জন্যেই উত্তম আদর্শ।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
لقد كان لكم فى رسول الله اسوة حسنة
অর্থ: অবশ্যই তোমাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ মুবারক।
কাজেই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ, সমর্থন ও অনুমোদন সাপেক্ষেই মূলত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করেন।
যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে ফতহুল ক্বাদীর ১ম খ- ৩৭৮ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-
قيل ان الـملائكة بعمائم بيض وقيل حمر وقيل خضر وقيل صفر
অর্থ: কারো মতে নিশ্চয়ই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা পাগড়ী পরিধান করেন সাদা রংয়ের, কারো মতে গন্ধম রংয়ের, কারো মতে সবুজ রংয়ের, আবার কারো মতে ঘিয়া রংয়ের।
“আল মুনতাযামু ফী তারীখিল মুলুকি ওয়াল উমাম” কিতাবের ৩য় খ- ১১৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে-
كان سيماء الـملائكة عمائم خضر
অর্থ: হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নিদর্শন হচ্ছে সবুজ রংয়ের পাগড়ী।
মাদারিজুন নুবুওওয়াত কিতাবের ২য় খ- ১৬০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, বদর জিহাদের দিন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাথায় সাদা পাগড়ী ছিল আর হুনাইন জিহাদের দিন সবুজ পাগড়ী ছিল।
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ উনাদের বর্ণনা দ্বারা সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বিশেষ নিদর্শন হিসেবে প্রতিভাত।
আর পাগড়ী পরিধান করা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত নিদর্শন উল্লেখ করে এই উম্মতের জন্যও পাগড়ী পরিধান করার ব্যাপারে তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عليكم بالعمائم فانه سيماء الـملئكة
অর্থ: তোমাদের উপর পাগড়ী পরিধান করা ওয়াজিব। কেননা পাগড়ী পরিধান করা হচ্ছে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত নিদর্শন। সুবহানাল্লাহ!
অনুরূপভাবে হযরত ছাহবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করতেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যা কিছু করতেন, তা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক আদেশ, মুবারক অনুসরণে, মুবারক অনুকরণে, মুবারক সমর্থন ও মুবারক অনুমোদনক্রমেই করতেন। সুবহানাল্লাহ!
মোটকথা, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাস্তব অনুকরণ ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। কথায়, কাজে, ওয়াজ-নছীহতে, উঠা-বসায়, চলা-ফেরায়, ব্যবহারে, লেবাস-পোশাকে, আমল-আখলাক্বে, এককথায় যাবতীয় ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূণ্যতম আদর্শ মুবারক উনাদের জীবন মুবারকে প্রতিফলিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার প্রসিদ্ধ কিতাব “মুছান্নাফ ইবনে আবী শাইবাহ” ৮ম খ- ২৪১ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت سليمان بن ابى عبد الله رحمة الله عليه قال ادركت الـمهاجرين الاولين يعتمون بعمائم كرابيس سود وبيض وحمر وخضر وصفر
অর্থ: হযরত সুলাইমান ইবনে আবী আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি প্রথম দিকের সকল মুহাজিরীন (হিজরতকারী ছাহাবী) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পাগড়ী পরিধান করতে দেখেছি কালো রংয়ের, সাদা রংয়ের, গন্ধম রংয়ের, সবুজ রংয়ের এবং ঘিয়া রংয়ের।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
والسابقون الاولون من الـمهاجرين والانصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعدلـهم جنت تجرى تحتها الانـهار خالدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم.
অর্থ: মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, যাঁরা সম্মানিত ঈমান আনার ক্ষেত্রে পূর্বর্তীদের মধ্যে অগ্রগামী উনারা এবং উনাদেরকে যারা উত্তমভাবে অনুসরণ করবেন, উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্টি মুবারক ঘোষণা করেছেন এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের জন্য কোশেশে করে থাকেন। উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ জান্নাত নির্ধারণ করে রেখেছেন, যার নি¤œদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত থাকবে। উনারা সর্বদা উক্ত জান্নাতসমূহে অবস্থান করবেন। এটা উনাদের জন্য বিরাট সফলতা বা কামিয়াবী। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت عرباض بن سارية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين الـمهديين تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ.
“হযরত ইরবায বিন সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত পালন করা অপরিহার্য। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো।” (আহমদ, তিরমীযী, ইবনে মাযাহ্, মিশকাত, মিরকাত)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে
عن حضرت عمر بن الخطاب عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم
অর্থ: “হযরত উমর বিন খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা সকলেই তারকা সাদৃশ্য, উনাদের যে কোন একজনকে অনুসরণ করলেই হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে।” (রযীন, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুমুয়াত, তা’লীক্ব, ত্বীবী, মুযাহিরে হক্ব)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال من كان مستنا فليستن بمن قدمات فان الحى لا تؤمن عليه الفتنة اولئك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلم كانوا افضل هذه الامة ابرها قلوبا واعمقها علما واقلها تكلفا اختارهم الله لصحبة نبيه ولاقامة دينه فاعرفوا لـهم فضلهم واتبعوا على اثرهم وتمسكوا بما استطعتم من اخلاقهم وسيرهم فانهم كانوا على الـهدى الـمستقيم.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি সম্মানিত শরীয়ত উনার সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়, তার উচিত যারা অতীত হয়েছেন উনাদেরকে অনুসরণ করা। কেননা জীবিতগণ ফিতনামুক্ত নন। আর যারা অতীত হয়েছেন উনারা হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণ। উনারা উম্মতের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্র, ইল্মের দিক দিয়ে সুগভীর এবং উনারা লোক দেখানো আমল করা হতে মুক্ত। মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী বা ছাহাবী হিসেবে মনোনীত করেছেন। কাজেই, উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত, শান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং উনাদের কথা ও কাজের অনুসরণ করো এবং যথাসাধ্য উনাদের সীরত-ছূরত মুবারককে গ্রহণ করো, কারণ উনারা হিদায়েত ও “ছিরাতুল মুস্তাক্বীম” উনার উপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।” (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩২)
মূল কথা হলো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণ স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই অনুসরণের শামিল।
উল্লেখ্য, সবুজ পাগড়ী পরিধান করা নিষেধ এ রকম কোন বর্ণনা কোথাও উল্লেখ নেই বরং সবুজ পোশাক ও সবুজ পাগড়ী ব্যবহারের স্বপক্ষে অসংখ্য দলীল রয়েছে। তাই সবুজ পাগড়ী পরিধান করা সুন্নত বলেই সাব্যস্ত হয়েছে।
আরো উল্লেখ্য ও স্মরণযোগ্য যে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিটি বিষয় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে কিংবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেই থাকতে হবে, তা নয় বরং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে এমন বহু বিষয় রয়েছে সর্বোপরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত অনেক বিষয় রয়েছে যা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে গভীর তায়াল্লুক-নিসবত থাকার বদৌলতে যামানার সম্মানিত উলিল আমরগণ অর্থাৎ যামানার সম্মানিত ইমাম মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনারা বর্ণনা করেছেন।
(এক) এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তিনি একবার সূরা আর-রহমান শরীফ উনার ছোট্ট একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ-
كل يوم هو فى شأن
উনার তাফসীর করলেন একাধারা দ্ইু বৎসর। তবুও যেন তাফসীর বাকী রয়ে গেল। উনার ভিতরে একটা ফখরের ভাব পয়াদ হলো, নিশ্চয়ই তিনি মস্ত বড় একজন তাফসীরকারক। উনার মতো তাফসীরকারক কমই দেখা যায়। অন্যথায় একখানা আয়াত শরীফ উনার তাফসীর দুই বৎসর করার পর বাকী থাকার কথা নয়। এরই মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় এক আগন্তুক উনার তাফসীরের মজলিসে গিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলেন, হুযূর! আপনি তাফসীর করছেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেহ একেক শানে অবস্থান করেন। বলুন তো মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন কোন শান মুবারকে আছেন এবং এখন তিনি কি করছেন? এ প্রশ্ন শুনে হযরত ইমাম ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি চুপ হয়ে গেলেন। কোন উত্তর দিতে পারলেন না।
দ্বিতীয়দিন আবার যখন তিনি তাফসীর করা শেষ করলেন সাথে সাথে উক্ত আগন্তুক ব্যক্তি একই প্রশ্ন করে বসলেন, সেদিনও তিনি কোন জাওয়াব দিতে পারলেন না। তৃতীয়দিনও একই ঘটনা ঘটলো। তিনি যারপর নেই লজ্জিত হলেন। রাতের বেলা তিনি খুব কান্নাকাটি করলেন, তওবা-ইস্তিগফার করলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলা দিয়ে ফায়সালা কামনা করে ঘুমিয়ে পড়লেন। স্বপ্নযোগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাক্ষাৎ মুবারক দিয়ে বললেন, হে ইবনে জাওযী! আপনার কি হয়েছে? ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের অক্ষমতার কথা ব্যক্ত করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যিনি আপনাকে প্রশ্ন করছেন, উনাকে আপনি চিনেন? তিনি বললেন যে, না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, প্রশ্নকারী ব্যক্তি হচ্ছেন হযরত খিযির আলাইহিস সালাম। তিনি আগামীকালও আসবেন এবং আপনাকে উক্ত বিষয়ে আবার প্রশ্ন করবেন। তখন আপনি জাওয়াবে বলবেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন ক্বদীম। উনার শান হচ্ছে আযালী-আবাদী শান মুবারক। কাজেই, তিনি নতুন করে কোন কাজ শুরু করেন না। তিনি শুরুতে যা করেছেন এখনও তাই করেন। তবে কখনও কখনও উনার কোন কোন শান মুবারক প্রকাশ পায়। সুবহানাল্লাহ!
সত্যিই পরের দিন আগন্তুক ব্যক্তি এসে যখন প্রশ্ন করলেন তখন সহসাই হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রশ্নের জাওয়াব দিয়ে দিলেন। জাওয়াব পেয়ে আগন্তুক ব্যক্তি তিনি বললেন, হে ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি আপনার যিনি নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম পেশ করুন যিনি আপনাকে আমার সুওয়ালের জাওয়াব জানিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
(দুই) হিজরী ৫৫৫ সনের ঘটনা। সম্মানিত রেফায়িয়া তরীক্বার ইমাম হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে গেলেন। মহা সম্মানিত রওজা শরীফ উনার নিকট গমন করে সালাম পেশ করলেন-
السلام عليك ياجدى صلى الله عليه وسلم
মহা সম্মানিত রওজা শরীফ হতে তৎক্ষনাৎ জবাব আসলো
وعليك السلام يا ولدى
মহা সম্মানিত রওজা শরীফ হতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি জাওয়াব মুবারক শুনে হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশেষ হাল পয়দা হলো। তিনি ক্বাছীদাহ শরীফ পাঠ করতে শুরু করলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন-
فى حالة البعد روحى كنت ارسلها
تقبل الارض عنى وهى نائبتى.
وهذة دولة الاسباح قد حضرت
فامدد يمينك كى كخطى بـها شفتى.
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুরে অবস্থানকালে আমি আমার রূহকে আপনার মুবারক খিদমতে প্রেরণ করতাম, যেন তা আমার পক্ষ হতে আপনার মুবারক ক্বদমবুছী করে যায়। এখন তো আমি সরাসরি আপনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়েছি। সুতরাং আপনি যদি আপনার পূত পবিত্র দাস্ত মুবারক জাহির মুবারক করে দিতেন, তাহলে তা চুম্বন মুবারক করে আমি ধন্য হতাম।
হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উপরোক্ত আরজী শেষ হওয়া মাত্রই মহা সম্মানিত রওজা শরীফ হতে নুরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পূত পবিত্র ডান হাত মুবারক জাহির করে দেন। তৎক্ষনাৎ হযরত আহমদ কবীর রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ সেই সময়ে পবিত্র মদীনা শরীফে অবস্থানকারী ৯০ হাজার লোক পূত পবিত্র দাস্ত মুবারক চুম্বন করে নিজেদেরকে চিরদিনের জন্য ধন্য করে নেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বুনিয়ানুল মুশাইয়াদ)
(তিন) বিশিষ্ট বুযুর্গ ও প্রখ্যাত ফার্ষী কবি হযরত শেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে না’ত শরীফ লিখতে লাগলেন। তিনি লিখলেন-
بلغ العلى بكماله
كشف الدجى بجماله
حسنت جميع خصاله
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওযা সাল্লাম তিনি তো মাক্বামাতের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত। উনার মুবারক জামালিয়তে সমস্ত আঁধার বিদূরীত হয়েছে। উনারই মুবারক উসীলায় সমস্ত কিছু সৌন্দর্যমন্ডিত হয়েছে।”
এতটুকু লিখে হযরত শেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি থেমে গেলেন। চতুর্থ লাইন কি হবে, তা ভাবতে লাগলেন। চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে পারছেন না। তিনি বেকারার পেরেশান হয়ে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে পুরোপুরি রুজূ হয়ে চতুর্থ লাইন মিলানের কোশেশে নিজেকে ব্যাপৃত রাখলেন। নিজের অজান্তেই এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলেন। মুবারক স্বপ্নে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ সাক্ষাত মুবারক লাভ করলেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে শেখ সা’দী! এত অস্থির কি জন্য? কি হয়েছে আপনার? হযরত শেখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুবারক খিদমতে নিজের অক্ষমতা ও অপারগতার বিষয়ে আরজী করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি চতুর্থ লাইন লিখুন-
صلوا عليه واله
উনার প্রতি এবং উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করুন। সুবহানাল্লাহ!
(চার) ইমামুল হিন্দ হযরত শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছে দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন-
اخبرنى سيدى الوالد قال كنت اصنع فى ايام الـمولد طعاما صلة بالنبى فلم يفتح لى سنة من السنين شئ اصنع به طعاما فلم اجد الا حمصا مقليا فقسمت بين الناس فرايته صلى الله عليه وسلم وبين يديه هذه الحمص مبتهجا بشاشا.
অর্থ: আমার বুযূর্গ পিতা (হযরত শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি) তিনি বলেন যে, নূরে মুজাসদসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ বা আগমনের তারিখে পবিত্র মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল করে ছওয়াব রেসানীর জন্য হামেশা বিশেষ তাবারুকের আয়োজন করতাম। এক বছর উক্ত তারিখে বিশেষ খাবারের আয়োজন করতে না পেরে কিছু চানাবুট আমি লোকজনের মধ্যে বিতরণ করলাম। অতঃপর আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেই চানাবুটগুলোর সম্মুখে অত্যন্ত উজ্জল এবং হাসিমাখা চেহারা মুবারক নিয়ে উপবিষ্ট দেখতে পেলাম। সুবহানাল্লাহ! (আদ্ দুররুছ্ ছামীন ফী মুবাশ্শিরাতিন্ নাবিয়্যিল আমীন)
অতএব, বিশ্ববিখ্যাত ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের উক্ত ঘটনা ও বর্ণনাসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্মানিত সুন্নতসমূহ বা বিষয়সমূহ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বর্ণনা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এবং উক্ত বিষয়সমূহ সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ উছূল বা মূলনীতি ইজমা ও ক্বিয়াস হিসেবে পরিগণিত ও সাব্যস্ত হয়েছে। যা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়। আর তা অস্বীকার করা কুফরী এবং পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
প্রসঙ্গত বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান পঞ্চদশ হিজরী শতকের যিনি মহান মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার সাথে একবার এক ব্যক্তি চার টুকরা বিশিষ্ট টুপির বিষয়ে ইখতিলাফ করেছিল। তখন সেই ব্যক্তি স্বপ্নে দেখলো যে, সে রওজা শরীফ উনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে এবং তার বর্ণনা মতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি টুপি মুবারক পরিহিত অবস্থায় রয়েছেন। উক্ত টুপি মুবারকের সামনের দিকে ডানে ও বামে দু’ পার্শ্বে দুটি সেলাইয়ের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। কিন্তু পিছনের সেলাইয়ের চিহ্নটি সামনে থেকে দেখা যাচ্ছিল না। অতঃপর সে ব্যক্তি বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন ধরণের টুপি খাছ সুন্নত? জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, টুপি সম্পর্কে এবং যত প্রকার সুন্নত রয়েছে, সে সম্পর্কে জানতে হলে আমার সম্মানিত আওলাদ যামানার মহান মুজাদ্দিদ- ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার সম্মানিত যিনি মুর্শিদ ক্বিবলা রয়েছেন উনার নিকট থেকে জেনে নিবেন। এ স্বপ্ন দেখার পরের দিনই উক্ত ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার খানকা শরীফে এসে উক্ত স্বপ্ন মুবারক বর্ণনা করে। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়া সবুজ পাগড়ী সম্পর্কে উল্লেখ করতে হয় যে, একদা রাজারবাগ সুন্নতী জামে মসজিদে ছলাতুয যুহর নামাযান্তে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি মুরীদ, মু’তাকিদ উনাদের দিকে ফিরে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করছেন, বিভিন্ন জনের সুওয়ালের জাওয়াবও প্রদান করছেন, এরই মধ্যে মুফতী খিতাবে ভূষিত একজন জিজ্ঞাসা করে বসলো, হুযূর ক্বিবলা! পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কিতাবের মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা ও কালো পাগড়ী পরিধান করেছেন বলে বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু তিনি সবুজ পাগড়ী পরিধান করেছেন; সে সম্পর্কে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করাটা কোন পর্যায়ের সুন্নত হবে? এর জাওয়াবে আওলাদে রসূল মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করেছেন কিনা এর কোন দলীল পাওনি বা কিতাবে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি কাউকে সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করিয়ে দেন উনার জন্য কি মাসয়ালা বা ফতওয়া হবে? শুনে রাখো, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে সাদা, সবুজ ও কালো তিন ধরণেরই পাগড়ী মুবারক পরিধান করিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, পাগড়ীর রং সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার বর্ণনা পরিলক্ষিত হলেও গ্রহণযোগ্য মতে সাদা, কালো ও সবুজ এই তিন রংয়েরই পাগড়ী পরিধান করা খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। যার কারণে পরবর্তীকালে সাধারণত উক্ত তিন প্রকার রংয়েরই পাগড়ী পরিধানের আমল জারী হয়ে আসছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে “সিয়াররুছ ছাহাবা” ৭ম খণ্ডের ৪০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, হযরত ইমাম ক্বাসিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে আবু বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অত্যন্ত মূল্যবান ও পছন্দনীয় রঙ্গীন পোশাক পরিধান করতেন। কোর্তা, পাগড়ী ও চাদর ইত্যাদি সমস্ত পোশাক ছিল সাধারণত সূতী কাপড়ের। আর পাগড়ী ছিল সাদা রংয়ের, তবে কখনো কখনো তিনি সবুজ রংয়ের পাগড়ী পরিধান করতেন।
রিজাল শাস্ত্রের বিশ্বখ্যাত ও বৃহৎ কিতাব তাহযীবুল কামাল ষষ্ঠ খ- ৩৬১ পৃষ্ঠার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قال حضرت ابو بكر بن خزيمة رحمة الله عليه رايت ابا عمار الحسين بن الحريث الـمروزى فى الـمنام بعد وفاته كانه على منبر رسول الله صلى الله عليه وسلم وكان عليه ثيابا بيضا وفى رأسه عمامة خضراء.
অর্থ: হযরত আবূ বকর ইবনে খুযাইমাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত আবূ আম্মার ইবনে হারীছ মারূযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইন্তিকালের পর উনাকে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিম্বর শরীফ উনার উপর অবস্থান করছেন উনার পরিধানে রয়েছে সাদা পোশাক আর মাথায় রয়েছে সবুজ পাগড়ী।
“সাওয়ানেহে হযরত ছাবির কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি” কিতাবের ১১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, বিশিষ্ট বুযূর্গ হযরত মাখদূম আলী আহমদ ছাবির কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সবসময় সবুজ রংয়ের পাগড়ী ব্যবহার করতেন।
অতএব, পাগড়ী সম্পর্কে উপরোক্ত দলীলসমৃদ্ধ সংক্ষিপ্ত জাওয়াব থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত হলো যে, সাদা ও কালো রংয়ের ন্যায় সবুজ রংয়েরও পাগড়ী পরিধান করা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাসম্মত এবং খাছ সুন্নত উনারও অন্তর্ভুক্ত।

ক্বলবী যিকির করা কি ফরয? ক্বলবী যিকির না করলে কি ক্ষতি?

জাওয়াব: 

 


উপরোক্ত সুওয়াল অনুযায়ী ২টা বিষয় সম্পর্কে সম্মানিত শরীয়ত উনার সঠিক ফতওয়া কি তা ফয়ছালা করা জরুরী।
প্রথমত: ক্বলবী যিকির করা কি? জাওয়াব হচ্ছে ক্বলবী যিকির করা ফরয।
দ্বিতীয়ত: ক্বলবী যিকির না করলে কি ক্ষতি? জাওয়াব হচ্ছে শয়তান বন্ধু বা সঙ্গী হবে এবং নেক কাজ থেকে ফিরে বদ কাজে মশগুল থাকবে। নাউযুবিল্লাহ! ক্বলবী যিকির করা ফরয, এটা আমাদের নিজস্ব বা বানানো কোন ফতওয়া নয়। এটা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ফতওয়া। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ এবং অনুসরণীয় হযরত ইমাম, মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদেরই ফতওয়া।
মূলত অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বলব হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে পবিত্র “ক্বলবী যিকির”। অর্থাৎ পবিত্র ইলমে তাছাওউফ তথা মুহলিকাত (বদ খাছলতসমূহ) ও মুনজিয়াত (নেক খাছলতসমূহ) সম্পর্কিত পবিত্র ইল্ম্ অর্জন করার সাথে সাথে ক্বলবী যিকির করতে হবে, তবেই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে ও হুযূরী ক্বল্ব্ অর্জিত হবে এবং নামাযসহ সকল ইবাদত-বন্দিগী শুদ্ধভাবে বা ইখলাছ উনার সাথে আদায় করা সম্ভব হবে। যার ফলে হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র ক্বলবী যিকির করাকে ফরয বলেছেন।
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
الا بذكر الله تطمئن القلوب
অর্থ : “সাবধান! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির মুবারক দ্বারাই ক্বলব (অন্তর) ইতমিনান বা পরিশুদ্ধ হয়। অর্থাৎ হুযূরী বা খুশু-খুযূ হাছিল হয়।” (পবিত্র সূরা রা’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه كان يقول لكل شىء صقالة وصقالة القلوب ذكر الله
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক জিনিস পরিষ্কার করার উপকরণ রয়েছে, আর ক্বল্ব্ বা অন্তর পরিষ্কার (পরিশুদ্ধ) করার উপকরণ (মাধ্যম) হচ্ছে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির (ক্বলবী যিকির)।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ, মিরকাত শরীফ)
অর্থাৎ পবিত্র ক্বলবী যিকির দ্বারা ক্বলব পরিষ্কার হয়ে পবিত্র ইখলাছ তথা খুশু-খুযূ বা হুযূরী হাছিল হয়।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা বুঝা গেলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার অর্থাৎ ইখলাছ তথা হুযূরী বা খুশু-খুযূ হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে যিকির অর্থাৎ পবিত্র “ক্বলবী যিকির।”
হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ পবিত্র যিকির উনাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন- লিসানী যিকির অর্থাৎ মৌখিক যিকির এবং পবিত্র ক্বলবী যিকির অর্থাৎ অন্তরের যিকির।
লিসানী যিকির হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, ওয়াজ-নছীহত ইত্যাদি। মূলত লিসানী যিকির উনার দ্বারা সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকা সম্ভব নয়। কারণ উল্লিখিত যিকিরসমূহ সময় ও স্থান বিশেষে করা সম্পূর্ণই অসম্ভব। যেমন ওযূ-ইস্তিঞ্জা, খাওয়া-দাওয়া, কথাবার্তা, নিদ্রা ইত্যাদি। অথচ পবিত্র শরীয়ত উনার নির্দেশ মুবারক হচ্ছে সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে যিকিরে মশগুল থাকা। কারণ বান্দা যে মুহূর্তে বা যে সময়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির করা থেকে গাফিল বা অমনোযোগী হয়, তখনই শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে পাপ বা নাফরমানীতে লিপ্ত করে দেয়। নাউযুবিল্লাহ! যিকির থেকে গাফিল থাকলে কি ক্ষতি হয়, সে প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
ومن يعش عن ذكر الرحـمن نقيض له شيطنا فهو له قرين. وانـهم ليصدونـهم عن السبيل ويـحسبون انـهم مهتدون.
অর্থ : “যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির থেকে বিরত (গাফিল) থাকে, আমি (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক) তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সেই শয়তান তার সঙ্গী হয় এবং তাকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে, তারা সৎ পথেই রয়েছে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشيطان جاثـم على قلب ابن ادم فاذا ذكر الله خنس واذا غفل وسوس
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবে আসন পেতে বসে থাকে। যখন সে পবিত্র যিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায়। আর যখন সে পবিত্র যিকির থেকে গাফিল হয়, তখন শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ উল্লেখ আছে যে-
فيه اشارة الى ان من دوام على ذكر الرحـمن لـم يقربه الشيطان بـحال قال بعضهم من نسى الله وترك مراقبته ولـم يستحى منه او اقبل على شىء من حظوظ نفسه قيض الله له شيطانا يوسوس له فى جـميع انفاسه ويغرى نفسه الى طلب هواها حتى يتسلط على عقله وعلمه وبيانه.
অর্থ : “উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে, যে ব্যক্তি সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকে, শয়তান কোনো অবস্থাতেই তার নিকটবর্তী হতে পারেনা। হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা বলেন, যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে যায় এবং উনার মুরাক্বাবা পরিত্যাগ করে এবং যতক্ষণ সে তার এ অবস্থা থেকে ফিরে না আসে অর্থাৎ যিকির-আযকার, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা না করে, অথবা সে খাহেশাতে নফসের কোনো একটির প্রতি অগ্রসর হয় তখন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য একটা শয়তান নিযুক্ত করে দেন। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। উক্ত শয়তান প্রতি মুহূর্তে তাকে ওয়াসওয়াসা দেয় এবং ধোঁকা দেয় খাহেশাতে নফসকে অনুসরণের জন্য। পরিণামে খাহেশাতে নফস তার আক্বল, ইলম ও বয়ানের উপর প্রবল হয়।” নাউযুবিল্লাহ!
উল্লেখ্য, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই যাদের ক্বলব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল তাদেরকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هوه وكان امره فرطا
অর্থ : “ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার ক্বলবকে আমার পবিত্র যিকির থেকে গাফিল করেছি। অর্থাৎ যার ক্বলবে আমার পবিত্র যিকির নেই, সে নফসকে (শয়তানকে) অনুসরণ করে। ফলে তার কাজগুলো (আমলগুলো) হয় পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ।” (পবিত্র সূরা কাহফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অতএব বুঝা গেলো যে, পবিত্র ক্বলবী যিকির ব্যতীত শয়তান ও শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা যেমন অসম্ভব তদ্রƒপ শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ থেকে বেঁচে থাকাও অসম্ভব।
তাই অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে বা শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে হলে পবিত্র ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ পবিত্র ক্বলবী যিকিরই সার্বক্ষণিক বা দায়িমী যিকির উনার একমাত্র মাধ্যম।
যেমন দায়িমী বা পবিত্র ক্বলবী যিকির সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
واذكر ربك فى نفسك تضرعا وخيفة ودون الـجهر من القول بالغدو والاصال ولا تكن من الغفلين.
অর্থ : “সকাল-সন্ধ্যা স্বীয় অন্তরে, সবিনয়ে, সভয়ে, অনুচ্চ আওয়াজে তোমার রব তায়ালা উনার পবিত্র যিকির (স্মরণ) কর। আর (এ ব্যাপারে) তুমি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৫)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির, ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জগদ্বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে কবীরে’ উল্লেখ করেন-
من الناس من قال ذكر هذين الوقتين والـمراد مداومة الذكر والـمواظبة عليه بقدر الامكان.
অর্থ : “কেউ কেউ বলে, শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার কথা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে। মূলত উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দায়িমী বা সার্বক্ষণিক যিকির এবং সাধ্যানুযায়ী যিকিরে মশগুল থাকা।” অনুরূপ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ান’ উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে।
প্রমাণিত হলো যে, অন্তরের পরিশুদ্ধতা ও দায়িমী হুযূরী অর্জন করতে হলে অবশ্যই পবিত্র ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ পবিত্র ক্বলবী যিকির ব্যতীত যেরূপ অন্তরের পরিশুদ্ধতা লাভ করা সম্ভব নয়, তদ্রুপ দায়িমী বা সার্বক্ষণিক হুযূরীও হাছিল করা সম্ভব নয়। তাই “তাফসীরে মাযহারী”তে উল্লেখ করা হয়েছে-
دوام الـحضور بالقلب اذ لايتصور دوام الذكر باللسان.
অর্থ : “দায়িমী হুযূরী বা যিকির কেবলমাত্র ক্বলবের দ্বারাই সম্ভব। কেননা লিসান বা মুখ দ্বারা দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে পবিত্র যিকির করা সম্ভব নয়।”
তাই সকলেই পবিত্র ইলমে তাছাওউফ উনার কিতাবসমূহে “পবিত্র ক্বলবী যিকির” করাকে ফরয বলেছেন এবং আরো বলেছেন ক্বলবী যিকির জারী না করতে পারলে শয়তান সঙ্গী বা সাথী হয় এবং সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কাজে মশগুল থাকে। অতএব, ক্বলবী যিকির করা ফরয।