জাওয়াবঃ
উল্লিখিত
তথাকথিত শীর্ষস্থানীয় মৌলভীরা হক্কানী আলিম নয় বরং এরা হচ্ছে উলামায়ে
‘ছূ’তথা দুনিয়াদার , ধর্মব্যবসায়ী, দুনিয়ালোভী নিকৃষ্ট মৌলভী। যারা
দুনিয়াবী ফায়দা হাছিলের জন্য অহরহ প্রকাশ্যে ছবি তোলে ও বেপর্দা হয়।অনরূপ
আরো বহু হারাম-নাজায়িয বা শরীয়ত বিরোধী কাজে তারা লিপ্ত হয় এবং অহরহ অসংখ্য
কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী তথা শরীয়ত বিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকে।তাদের অসংখ্য
কুরআন-সুন্নাহ তথা শরীয়ত বিরোধী বক্তব্যের মধ্যে একটি হলো, “ইসলাম
ক্বায়েমের স্বার্থে বেপর্দা হওয়া, ছবি তোলা জায়িয।“ নাউজুবিল্লাহ!
মূলতঃ তাদের এবক্তব্য কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।কেন
অনুরূপ সূরা বাক্বারাহ, সূরা তওবাহ, সূরা আহযাব, সূরা নজম, সূরা হাশরসহ অনেক সূরার আয়াত সমূহের দ্বারা এবং অসংখ্য হাদীছ শরীফের দ্বারা ছবি তোলাকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর বুখারী শরীফের হাদীছ শরীফে ঘোষণা করে দেয়া হয়েছে যে,
الحلال بين والحرام بين.
অর্থঃ- “হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট।”
সুতরাং নতুন করে কোন হারাম হালাল হবেনা এবং কোন হালাল ও হারাম হবেনা। অতএব, যদি কোন ব্যক্তি সেটা করে অর্থাৎ কোন হারাম বিষয়কে হালাল বা জায়িয করে অথবা কোন হালাল বিষয়কে হারাম করে তাহলে সে ইসলাম ও মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদে পরিণত হবে।কারণ আক্বাঈদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে,
استحلال المعصية كفر.
অর্খাৎ- “কোন নাফরমানী মূলক বিষয় তথা হারাম বিষয়কে হালাল বা জায়িয সাব্যস্ত করা কুফরী।“(শরহে আক্বাঈদে নছফী)
মূলত: দেশের শীর্ষস্থানীয় মুফতী, মাওলানা, খতীব, শাইখুল হাদীছ, মুফাস্সিরে কুরআন, দলের আমীর নাম দিয়ে যারা শরীয়তে সাব্যস্তকৃত হারাম বিষয়কে দ্বীন কায়িমের দোহাই দিয়ে জায়িয বলতে চায় তারা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক যাদেরকে হাদীছ শরীফে উলামায়ে ‘ছূ’, দাজ্জালে কায্যাব হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের থেকে দূরে সরে নিজেদের ঈমান-আমল হিফাযত করতে বলা হয়েছে।
কারণ, তারা সৃষ্টির মাঝে সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যার কারণে কুরআন শরীফে তাদেরকে কুকুর ও গাধার সাথে তুলনা করা হয়েছে।কালামুল্ল
والذى خبث لايخرج الا نكدا.
অর্থঃ- “যা হারাম তা দ্বারা নাপাকী ব্যতীত কিছু পয়দা হয়না।” (সূরা আ'রাফ-৫৮)
কালামুল্লাহ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك م الكا فرون.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা কাফির।” (সূরা মায়িদা- ৪৪)
من لم يحكم بما انزل الله فاولئكهم الظلمون.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা যলিম।” (সূরা মায়িদা- ৪৫)
من لم يحكم بما انزل الله فاولئكهم الفا سقون.
অর্থঃ- “আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা ফাসিক”(সূরা মায়িদা- ৪৭)
পর্দা শুধু মহিলার জন্য নয়, পুরুষের জন্য ও করতে হবে ও ইসলাম কায়িম করার জন্য বেপর্দা হওয়া নাজায়িজঃ
অনেকে বলে থাকে যে, ‘পর্দা তো ফরয কেবল মহিলাদের জন্য। আল্লাহপাক কুরআন শরীফের সূরা নিসায় মহিলাদের পর্দার কথা বলেছেন, পুরুষদের নয়।‘ নাউজুবিল্লাহ!
তাদের উক্ত কথা মোটেও শরীয়তসম্মত নয়।কারণ, শুধু সূরা নিসার মধ্যেই পর্দার সব আহকাম বর্ণনা করা হয়নি।আরো সূরা রয়েছে।তার মধ্যে পুরুষ-মহিলা সকলের জন্যেই পর্দার হুকুম বর্ণনা করা হয়েছে।যেমন, সূরা নূরের ৩০নং আয়াত শরীফের মধ্যে সরাসরি পুরুষদেরকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون.
অর্থঃ- “হেহাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি মুমিন পুরুষদের কে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরুকে হিফাজত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহপাক জানেন, তারা যা করে।”
আর সূরা আহযাবের ৫৩নং আয়াতশরীফে পুরুষদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন,
واذا سأ لتموهن متا عا فاسلوهن من ورا ء حجاب ذلكم اطهر لقلوبكم وقلوبهن
অর্থঃ- “যখন তোমরা মহিলাদের কাছে কিছু চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে।এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতার কারণ।”
আর হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে- আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থঃ- “হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা।প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয়) ক্ষমা করা হবে, কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টিকে ক্ষমা করা হবেনা।” (মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
لعن الله النا ظر والمنظور اليه.
অর্থঃ- “যে মহিলাকে দেখে, আর যে মহিলা নিজেকে প্রদর্শন করে, উভয়ের প্রতি আল্লাহ্পাক উনার লানত।“ (মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ বেগানা মহিলাদের প্রতি প্রত্যেকদৃষ্টিত
মূলতঃ পর্দার খিলাফকারী হচ্ছে সর্বোচ্চ কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার।অতএব,
ছবি-ভিডিও হারামঃ
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كل مصور فى النار.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক ছবি তুলনে ওয়ালা জাহান্নামী।” নাঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থ: হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আজাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০১)
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে। (মিশকাত শরীফ- ৩৮৫)
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ২০১)
قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থ: হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে ইয়াসার ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা উনহু উনার নিকট শুনেছি, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول قال الله تعالى ومن اظلم ممن ذهب يخلق كخلقى فليخلقوا ذرة اوليخلقوا حبة او شعيرة
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত তৈরী করে। তাদেরকে বলা হবে- তাহলে তোমরা একটি পিপিলিকা অথবা একটি শস্য অথবা একটি গম তৈরী করে দাও।” (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৫)
عن سعيد قال جاء رجل الى ابن عباس فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فا علا فاصنع الشجر وما لا نفس له.
অর্থ: হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। সে ব্যক্তি উনার নিকটবর্তী হল। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। এবং মহান আল্লাহ্ পাক তিনি প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবি গুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” এবং ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)
عن عائشة عليها السلام حدثته ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.
অর্থ: উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ৮৮০, মিশকাত পৃঃ ৩৮৫)
অতএব, “হারাম কাজ করে ইসলাম কায়িমের কথা বলা”- এটা সম্পূর্ণ কুরআন-সুন্নাহর খিলাফ কথা এবং মিথ্যা ধোকা ও প্রতারণার শামীল। এথেকে সকলকে সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে
No comments:
Post a Comment